পিএইচডি বা নেট ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির সিদ্ধান্তে বিতর্ক

শিক্ষা খাতে উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন বা ইউজিসি (UGC)-এর নতুন সিদ্ধান্তে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচডি বা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট…

পিএইচডি বা নেট ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির সিদ্ধান্তে বিতর্ক

শিক্ষা খাতে উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন বা ইউজিসি (UGC)-এর নতুন সিদ্ধান্তে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচডি বা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট নেট যোগ্যতা বাধ্যতামূলক না করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

ইউজিসি (UGC) এর সর্বশেষ খসড়া নিয়মাবলীতে প্রযুক্তি, নাটক, যোগ, সঙ্গীত, পারফর্মিং আর্টস, ভিজ্যুয়াল আর্টস এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় শিল্পকলার মতো বিষয়গুলির জন্য পিএইচডি ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের নেট পরীক্ষার যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন হবে না। তবে অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগের জন্য নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।

বিশেষভাবে পারফর্মিং আর্টস এর ক্ষেত্রে প্রার্থীদের স্নাতক ডিগ্রি এবং পাঁচ বছরের পেশাদার অভিজ্ঞতা থাকলেই চলবে। যদি তারা রাজ্য বা জাতীয় পর্যায়ে “প্রশংসনীয় পেশাদার অর্জন” প্রমাণ করতে পারেন এবং তাত্ত্বিক জ্ঞান ও যৌক্তিক যুক্তি দিয়ে পড়ানোর সক্ষমতা রাখেন।

অথচ অধিকাংশ শিক্ষাবিদরা মনে করছেন যে পিএইচডি বা নেট ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রমেশ চন্দ্র ডেকা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন “আমি মনে করি, নেট বা পিএইচডি না থাকার কারণে শিক্ষক নিয়োগের মান কমে যাবে। এটি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।” তিনি আরো বলেছেন, “দেশে যে সব বিষয় এখন নেট এর আওতায় নেই, সেগুলির জন্য স্টেট লেভেল এলিজিবিলিটি টেস্ট চালু করা যেতে পারে। তবে নেট অথবা পিএইচডি-ই উচিত সব বিষয়ের জন্য সহকারী অধ্যাপকের জন্য কমপক্ষে যোগ্যতা।”

জেএনইউ-র প্রাক্তন কম্পিউটার সায়েন্স অধ্যাপক রাজীব কুমার বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের পাঠদানকারী শিক্ষকরা, বিশেষ করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে, পিএইচডি ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। নেট যোগ্যতাও কখনোই পিএইচডির বিকল্প হতে পারে না।” তিনি আরও যোগ করে বলেছেন, “ইউজিসি-কে ভবিষ্যতের জন্য বিষয়ের ভিত্তিতে শিক্ষক প্রয়োজনের পূর্বাভাস প্রস্তুত করতে হবে, যাতে ছাত্ররা তাদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে পারে।”

Advertisements

অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান এস. প্রসন্ন শ্রী বলেছেন, “১৯৮০ দশকে যখন আমি লেকচারার ছিলাম, তখন বিশেষ প্রতিভাধর শিল্পী ও শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনারারি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ করা হতো।” তিনি মনে করেন যে, পারফর্মিং আর্টস এবং ফাইন আর্টসের ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ এবং প্রতিভাধর মানুষরা শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম।

গুরু জমভেশ্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আর.কে. চৌহান বলেন, “ইউজিসি(UGC) ২০১৮ সালে ঘোষণা করেছিল যে, ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পিএইচডি বাধ্যতামূলক হবে। কিন্তু এখন তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আগে হয়তো কিছু বিষয়ের জন্য নেট বা পিএইচডি প্রার্থী ছিল না, তবে এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং -ইউজিসিকে এই বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে।”

এই সিদ্ধান্তে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। ইউজিসি(UGC)-র এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।