দেবাশীষ হালদার (debashish-halder) অভয়া কাণ্ডে প্রতিবাদী মঞ্চের এক অন্যতম পরিচিত মুখ। এবার স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে বদলির নোটিশ জারি হল এই প্রতিবাদী ডাক্তারের নামে। ২০২৪ সালের আগস্টে কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে এক জুনিয়র চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা করে। এই ঘটনায় হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের গ্রেপ্তার এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতি, নিরাপত্তাহীনতা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি ওঠে।
ডা. দেবাশীষ হালদার (debashish-halder) এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মী ডা. অনিকেত মাহাতো হাসপাতালে দুর্নীতি, ‘দাদাগিরি’ এবং নিরাপত্তার অভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁদের নেতৃত্বে ধর্মঘট, বিক্ষোভ এবং সরকারের কাছে সংস্কারের দাবি জানান। এই আন্দোলন রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সমস্যাগুলোকে সামনে এনেছে।
বদলির ঘোষণা ও বিতর্ক (debashish-halder)
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ডা. দেবাশীষ হালদারকে (debashish-halder) আরজিকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে বদলি করে অন্যত্র পাঠানোর নির্দেশ জারি করে। এই সিদ্ধান্তের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক্স-এ প্রকাশিত পোস্টে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “৭৭৮ জনের মধ্যে শুধু দেবাশীষ হালদারই কেন?”
এই বদলিকে সরকারের প্রতিহিংসামূলক মনোভাবের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, অভয়া কাণ্ডে সরকার ও হাসপাতাল প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কারণেই ডা. হালদারকে লক্ষ্য করা হয়েছে। আবার অনেকে মনে করছেন এখন চাকরি হারা ইস্যুতেই সবার মনোযোগ তাই এই আবহেই ডা. হালদারকে বদলি করে দেওয়া হল যাতে এই ইস্যু নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরী না হয়।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দেবাশীষ বলেছেন প্রথমে তাকে হাওড়া জেলাতে বদলি করা হয় কিন্তু তারপর সেটা বদল হয়ে কি করে অন্য জায়গায় হতে পারে। তাহলে কাউন্সেলিংয়ের দরকার কি ছিল আর সবচেয়ে বড় কথা ৭৭৮ জনের মধ্যে শুধু তার সাথেই কেন এমন হল।
এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়, “কেন দেবাশীষকে বদলি?” (debashish-halder) এই প্রশ্নের সঙ্গে #RGKarProtest এবং #DebashishHalder হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ব্যাপক সমর্থন জানানো হয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ এই বদলিকে সরকারের দমননীতির অংশ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা অভিযোগ করছেন যে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার প্রতিবাদী কণ্ঠকে নীরব করার চেষ্টা করছে।
সরকারের প্রতিহিংসার অভিযোগ
অভয়া কাণ্ডের পর থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এবং দোষীদের রক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। ডা. হালদারের (debashish-halder) মতো চিকিৎসকরা এই সমস্যাগুলো প্রকাশ্যে তুলে ধরায় সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে। বিরোধী দল, বিশেষ করে বিজেপি, এই বদলিকে সরকারের “প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি” হিসেবে অভিহিত করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই ঘটনাকে তুলনা করেছেন পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা অন্যান্য কর্মীদের শাস্তির সঙ্গে। এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ভাবে উঠে আসে অভয়া র ঘটনার ঠিক পরেই মূল অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ কে বরখাস্ত না করে অন্য আরেকটি মেডিক্যাল কলেজে বদলি।
এই বদলির সময়ও উল্লেখযোগ্য। অভয়া কাণ্ডের তদন্ত এখনও চলছে, এবং সিবিআই তদন্তে নতুন তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ডা. হালদারের বদলিকে অনেকে তদন্ত থেকে মনোযোগ সরানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন এই বদলির প্রতিবাদে ধর্মঘট বা আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে হংকংয়ের প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট ও জনমত
অভয়া কাণ্ড পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সংকটকে প্রকাশ করেছে। সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাব, চিকিৎসকদের ওপর হামলা, এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ডা. হালদারের মতো চিকিৎসকরা এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, তাঁর বদলি এই প্রতিবাদী আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করেন, এই বদলি কেবল ডা. হালদারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সকল প্রতিবাদী চিকিৎসকদের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। এক্স-এর পোস্টগুলোতে দেখা যায়, জনগণ এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছে এবং সরকারের কাছে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে।
সরকারের অবস্থান
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এখনও ডা. হালদারের (debashish-halder) বদলি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে, সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে এটি “প্রশাসনিক প্রয়োজনের” অংশ। এই ব্যাখ্যা জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন বা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিরোধী দলগুলো এই ঘটনাকে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের “স্বৈরাচারী মনোভাব” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
ডা. দেবাশীষ হালদারের বদলি অভয়া কাণ্ডের আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে বৃহত্তর আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার এবং ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও তীব্র করতে পারে। একই সঙ্গে, এটি সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অভয়া কাণ্ডের তদন্ত এখনও চলছে, এবং সিবিআইয়ের হাতে নতুন তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ডা. হালদারের বদলি সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাকে “প্রতিহিংসার আরেক নাম” হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। জনগণ এবং চিকিৎসক সম্প্রদায় এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে।
ডা. দেবাশীষ হালদারের (debashish-halder) বদলি শুধু একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট ও সরকারের দায়িত্ব নিয়ে বৃহত্তর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা প্রতিবাদী কণ্ঠকে নীরব করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা অভয়া কাণ্ডে ন্যায়বিচারের লড়াইকে আরও জোরদার করতে পারে। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ কীভাবে জনমত ও আন্দোলনকে প্রভাবিত করবে, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে।