কিশানগঞ্জে দুটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত তিন

শুভম কুমার, কিশানগঞ্জ: বিহারের কিশানগঞ্জ (Kishanganj) জেলায় মঙ্গলবার দুটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনাগুলি এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক…

Deadly Collision in Kishanganj: Dump Truck Driver Killed, Police Investigate

শুভম কুমার, কিশানগঞ্জ: বিহারের কিশানগঞ্জ (Kishanganj) জেলায় মঙ্গলবার দুটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনাগুলি এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ও শোকের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাতম ছড়িয়ে পড়েছে। দুটি দুর্ঘটনাই বাহাদুরগঞ্জ থানা এলাকার ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩২৭-ই-তে ঘটেছে, যা স্থানীয়দের মতে, দ্রুতগতির যানবাহন এবং চালকদের অসতর্কতার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

Read HindI: किशनगंज में दो सड़क हादसे, एक की मौत

   

প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে বাহাদুরগঞ্জ থানা এলাকার দারুল উলুম চৌকের কাছে। এখানে ন্যাশনাল হাইওয়ের উপর একটি ত্রুটিযুক্ত ডাম্পার দাঁড়িয়ে ছিল। ডাম্পারের চালক মজিরুল এটি মেরামত করছিলেন। এমন সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি কন্টেনার ডাম্পারটিকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা মারে। এই সংঘর্ষে দুটি যানবাহনই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ভাগ্যবশত, ডাম্পারের চালক মজিরুল ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। কন্টেনারের চালকও গুরুতর আহত হন। আহত চালককে তাৎক্ষণিকভাবে কিশানগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে বাহাদুরগঞ্জ থানার ইনচার্জ নিশিকান্ত কুমার ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ মজিরুলের মরদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়েছে এবং দুটি যানবাহন জব্দ করেছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কন্টেনারের দ্রুতগতি এবং সম্ভবত চালকের অসতর্কতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

একই দিনে, বাহাদুরগঞ্জ থানা এলাকায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। বিকেল চারটে নাগাদ ন্যাশনাল হাইওয়েতে একটি দ্রুতগতির ট্রাক রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং সড়কের পাশে উল্টে যায়। এই ঘটনায় ট্রাকের চালক গুরুতর আহত হন। তবে চালকের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত চালককে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত শুরু করেছে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে এবং সড়ক পরিষ্কার করার কাজ চলছে।

Advertisements

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩২৭-ই-তে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁদের অভিযোগ, ফোর-লেন সড়ক নির্মাণের পর থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দ্রুতগতির যানবাহন, চালকদের অসতর্কতা এবং সড়কের নকশায় কিছু ত্রুটি এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা রহিম শেখ বলেন, “এই সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ফোর-লেন হওয়ার পর যানবাহনের গতি বেড়েছে, কিন্তু সড়ক নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রশাসনের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”

এলাকার আরেক বাসিন্দা সুজিত সাহা বলেন, “এই হাইওয়েতে স্পিড ব্রেকার বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। ফলে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। আমরা চাই প্রশাসন এই সড়কে নজরদারি বাড়াক।” স্থানীয়রা দাবি করেছেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পুলিশি টহল, স্পিড ব্রেকার স্থাপন এবং চালকদের জন্য সচেতনতা প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

এই দুটি দুর্ঘটনা কিশানগঞ্জে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ফোর-লেন সড়ক নির্মাণের ফলে যানবাহনের গতি বৃদ্ধি পেলেও, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধু তদন্ত নয়, সড়ক নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

এই ঘটনাগুলি কিশানগঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে শোক ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন। এলাকাবাসী আশা করছেন, প্রশাসন এই ঘটনাগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।