ডবল ইঞ্জিন সরকারের জমানায় দলিত নিগ্রহ নতুন ঘটনা নয় (Double-Engine)। ঠিক এরকম ই একটি ঘটনা সামনে এসেছে ওড়িশার গঞ্জাম জেলায়। গঞ্জাম জেলায় গরু পাচারের সন্দেহে দুই দলিত পুরুষের উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বাবুলা নায়েক (৫৪) এবং বুলু নায়েক (৪২), সিঙ্গিপুর গ্রামের বাসিন্দা, গত ২২ জুন ধারাকোট পুলিশ স্টেশনের অধীনে খারিগুম্মা গ্রামে স্বঘোষিত ‘গোরক্ষক’দের একটি দলের হাতে নির্যাতনের শিকার হন।
এই ঘটনায় তাঁদের মাথা আংশিক মুণ্ডন করা হয়, হামাগুড়ি দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ চলতে বাধ্য করা হয়, ঘাস খাওয়ানো হয় এবং নর্দমার দূষিত জল পান করতে বাধ্য করা হয়। এই ঘটনা বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের আমলে দলিত সম্প্রদায়ের উপর ক্রমবর্ধমান নিগ্রহের একটি নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গঞ্জামের পুলিশ সুপার (এসপি) (Double-Engine) সুবেন্দু কুমার পাত্র জানিয়েছেন, “২২ জুনের এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ঘটনার পরপরই একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত নয়জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য জড়িত ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দিয়েছি যে শীঘ্রই চার্জশিট দাখিল করা হবে এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।”
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী বাবুলা নায়েক এবং বুলু নায়েক হরিপুর থেকে তাঁদের গ্রাম সিঙ্গিপুরে দুটি গরু এবং একটি বাছুর একটি অটোরিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই গবাদি পশুগুলি বাবুলার মেয়ের বিয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী উপহার হিসেবে কেনা হয়েছিল। খারিগুম্মা গ্রামে পৌঁছানোর সময় একদল স্বঘোষিত ‘গোরক্ষক’ তাঁদের পথ আটকে দেয় এবং গরু পাচারের অভিযোগ তুলে ৩০,০০০ টাকা জরিমানা দাবি করে। ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে অস্বীকার করলে, তাঁদের উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়।
একজন পুলিশ আধিকারিক জানান, (Double-Engine) “অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীদের একটি সেলুনে নিয়ে গিয়ে তাঁদের মাথা আংশিক মুণ্ডন করে। এরপর তাঁদের প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ হামাগুড়ি দিয়ে চলতে বাধ্য করা হয়। তাঁদের মুখে ঘাস গুঁজে দেওয়া হয় এবং নর্দমার দূষিত জল পান করতে বাধ্য করা হয়।” এই পাশবিক কাণ্ড জাহাদা গ্রামের রাস্তায় সবার সামনে ঘটে, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ভুক্তভোগীরা কোনোরকমে নির্যাতনকারীদের কবল থেকে পালিয়ে ধারাকোট পুলিশ স্টেশনে গিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করে এবং সাতজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। মামলাটি ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় এবং তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (নিগ্রহ প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯-এর অধীনে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
ডবল ইঞ্জিন সরকারের আমলে দলিত নিগ্রহের ইতিহাস (Double-Engine)
ওড়িশায় বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার(Double-Engine)কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই বিজেপি শাসন—ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলিত সম্প্রদায়ের উপর নিগ্রহের ঘটনা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গরু পাচারের অভিযোগে দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে স্বঘোষিত ‘গোরক্ষক’দের হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনাগুলি প্রায়ই সামাজিক বৈষম্য, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং স্থানীয় ক্ষমতার দাপটের সঙ্গে জড়িত।
বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং কংগ্রেস, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়েক বলেছেন, “বিজেপি সরকারের আমলে দলিত ও আদিবাসীদের উপর নিগ্রহ বেড়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি।” কংগ্রেস নেতা নরসিংহ মিশ্র দাবি করেছেন, “বিজেপির শাসনে ‘গোরক্ষা’র নামে দলিতদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। সরকারের উচিত এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”
দলিত সংগঠনগুলিও এই ঘটনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। স্থানীয় দলিত নেতা রমেশ নায়েক বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাদের সম্প্রদায়ের উপর ক্রমাগত বৈষম্যের প্রতিফলন। আমরা ন্যায়বিচার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
সরকার ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি (Double-Engine) এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, “আমাদের সরকার দলিত নিগ্রহের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করার এবং তাঁদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, বিরোধী দল এই প্রতিশ্রুতিকে ‘ফাঁপা’ বলে সমালোচনা করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও, স্থানীয় প্রশাসন গ্রামে শান্তি বজায় রাখতে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সুখোই-৩০-এর চাকা ঘোরাবে রথ, কলকাতা রথযাত্রায় বিশ্বশান্তির বার্তা
সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। অনেকে বিজেপি সরকারের (Double-Engine) আমলে দলিতদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ডবল ইঞ্জিন সরকার মানে দলিতদের উপর ডবল অত্যাচার। এই ধরনের ঘটনা কবে বন্ধ হবে?” আরেকজন লিখেছেন, “গোরক্ষার নামে এই নিগ্রহ শুধু সামাজিক বৈষম্যই নয়, মানবাধিকারের লঙ্ঘনও।”
গঞ্জামের এই ঘটনা ভারতের সামাজিক কাঠামোতে গভীরভাবে প্রোথিত জাতিগত বৈষম্য এবং দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচারের একটি প্রকাশ। বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের আমলে এই ধরনের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের প্রতি চাপ বাড়ছে।
এই ঘটনা কেবল আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নই নয়, বরং একটি সমতামূলক সমাজ গঠনের চ্যালেঞ্জও। সরকার, প্রশাসন এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন