লাদাখে নতুন চোখাং বিহার মঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন দলাই লামার

লাদাখের লে-তে ৩ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে তিব্বতি আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা (Dalai Lama) চোখাং বিহার মঠের পুনর্নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনায় লাদাখ…

Dalai Lama new monastery innovation

লাদাখের লে-তে ৩ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে তিব্বতি আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা (Dalai Lama) চোখাং বিহার মঠের পুনর্নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনায় লাদাখ বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি চেরিং দোর্জে লাকরুকের নেতৃত্বে ধর্মীয় নেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এই অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী লাদাখি সংগীত এবং খাতাক (সাদা স্কার্ফ) প্রদানের মাধ্যমে দলাই লামাকে উষ্ণ স্বাগত জানানো হয়। তাঁর এই সফর এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন লাদাখের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

   

চোখাং বিহারের তাৎপর্য

চোখাং বিহার মূলত ১৯৫৭ সালে নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিহারটি একটি আধুনিক এবং শক্তিশালী কাঠামো হিসেবে পুনর্গঠিত হবে। দলাই লামা তাঁর বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেন, “এই বিহার শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা নৈমিত্তিক কথোপকথনের স্থান হবে না।

এটি বৌদ্ধ দর্শনের গভীর অধ্যয়ন ও বিতর্কের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে, যা আগামী প্রজন্মের জন্য জ্ঞানের উৎস হয়ে উঠবে।” তিনি এই বিহারকে বৌদ্ধ শিক্ষার একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুষ্ঠানের বিবরণ

অনুষ্ঠানে উপস্থিত লাদাখ বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি চেরিং দোর্জে লাকরুক এই ঘটনাকে “লাদাখের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় মুহূর্ত” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “তিন মাস আগে আমরা দলাই লামার কাছে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম।

তাঁর আগমন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।” লাকরুক আরও জানান, বিহারটি সম্পূর্ণ হলে এখানে বৌদ্ধ শিক্ষা প্রবর্তন করা হবে, কারণ শুধু মন্দির নির্মাণই যথেষ্ট নয়। এই বিহারটি লাদাখের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।

লাদাখের বৌদ্ধ ঐতিহ্য

লাদাখ ভারতের বৌদ্ধ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অসংখ্য মঠ বা গোম্পা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের পাশাপাশি স্থাপত্যের জন্যও বিখ্যাত। চোখাং বিহারের পুনর্নির্মাণ এই ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

Advertisements

দলাই লামার এই সফর লাদাখের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে আধ্যাত্মিক উৎসাহ সঞ্চার করেছে। এর আগে, জুলাই ২০২৫-এ জানস্কার উপত্যকার কারশা মঠে তিনি প্রায় ৩০,০০০ ভক্তের উপস্থিতিতে ‘ইয়ারচোস চেনমো’ নামে একটি ধর্মীয় সমাবেশে বৌদ্ধ শিক্ষা প্রদান করেন।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাব

চোখাং বিহারের পুনর্নির্মাণ শুধু লাদাখের জন্যই নয়, ভারত ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। লাদাখ এবং ভুটানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আরও জোরদার হবে। গত অক্টোবরে ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল চোখাং বিহার পরিদর্শন করেছিল, যা এই সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে।

রেপো রেট অপরিবর্তিত! মূল্যস্ফীতি কমলেও শুল্ক অনিশ্চয়তায় RBI’র উদ্বেগ

দলাই লামার দৃষ্টিভঙ্গি

দলাই লামা বরাবরই শান্তি, সমবেদনা এবং জ্ঞানের প্রচারে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বৌদ্ধ দর্শনের অধ্যয়ন এবং বিতর্ক মানুষের মনে জ্ঞান ও সমবেদনার বীজ বপন করে।” চোখাং বিহারকে তিনি এমন একটি কেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করেন, যেখানে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং গভীর দার্শনিক অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন উন্নত হবে। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি লাদাখের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হবে।

চোখাং বিহারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন লাদাখের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দলাই লামার উপস্থিতি এই ঘটনাকে আরও গৌরবময় করে তুলেছে। এই বিহার কেবল একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে। লাদাখের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে এই পুনর্নির্মাণ প্রকল্প একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।