আরব সাগরে মৌসুমোত্তর প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ (Cyclone Shakhti) ক্রমশ আরও শক্তিশালী হয়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) শনিবার জানিয়েছে, শক্তি বর্তমানে একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে (Severe Cyclonic Storm) পরিণত হয়েছে এবং আগামী কয়েকদিনে এটি গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের উপকূলে প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিমধ্যেই দুই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রাপ্ত আইএমডি-র তথ্য অনুযায়ী, শক্তি ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে আরব সাগরের উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থান করছে। এটি গুজরাটের দ্বারকা থেকে প্রায় ৪২০ কিমি পশ্চিমে, নালিয়া থেকে ৪৭০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রায় ৪২০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ওমানের মাসিরাহ দ্বীপ থেকে প্রায় ৬০০ কিমি পূর্ব-উত্তরপূর্বে অবস্থান করছে। গত ছয় ঘণ্টায় এটি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ কিমি বেগে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত শক্তি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে এবং তারপর ৬ অক্টোবর সকাল থেকে এটি পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে ঘুরে দুর্বল হতে শুরু করবে। তবুও উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত, ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং উত্তাল সমুদ্র পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
শক্তি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের উপকূলীয় জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলি ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF ও SDRF) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে উপকূলবর্তী গ্রামের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে আইএমডি। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম আরব সাগর, মধ্য আরব সাগর এবং গুজরাট ও উত্তর মহারাষ্ট্র উপকূল সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে। সমুদ্রের অবস্থা অত্যন্ত উত্তাল থাকবে এবং ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়বে বলে জানানো হয়েছে।
আরব সাগরে বঙ্গোপসাগরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ‘তাউকতে’ (২০২১) ও ‘বিপর্জয়’ (২০২৩)-এর মতো শক্তিশালী ঝড় পশ্চিম উপকূলে গুরুতর প্রভাব ফেলেছিল। এবারের ‘শক্তি’ও একইভাবে সতর্কবার্তার ঘণ্টা বাজাচ্ছে, যদিও এটি স্থলভাগে পৌঁছানোর আগেই দুর্বল হয়ে পড়বে বলে ধারণা।
“শক্তি” নয়, “Shakhti” নামটি প্রস্তাব করেছে শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ এশিয়ার ১৩টি দেশ মিলে যে আঞ্চলিক ঘূর্ণিঝড় নামকরণ কমিটি তৈরি করেছে, সেখানে নামগুলি আগেই নির্ধারিত থাকে এবং তা পর্যায়ক্রমে ব্যবহৃত হয়। শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত নাম হওয়ায় এর বানানে অতিরিক্ত ‘h’ যুক্ত হয়েছে।
‘শক্তি’ আপাতত উপকূলে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা কম হলেও এর প্রভাবে পশ্চিম ভারতের উপকূলীয় জেলাগুলিতে বিপজ্জনক আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই রাজ্য সরকার এবং বাসিন্দাদের আবহাওয়া দফতরের পরামর্শ মেনে সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।