অন্ধ্র-ওডিশায় ‘মোন্থা’র দাপট: ৬০-এরও বেশি ট্রেন বাতিল, ব্যহত উড়ান, উপকূলজুড়ে প্রবল বৃষ্টি

Cyclone Montha Kakinada Landfall

হায়দরাবাদ: খেল দেখাতে শুরু করল ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ (Cyclone Montha)। বঙ্গোপসাগরের উপর গভীর নিম্নচাপ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এই ঘূর্ণিঝড় সোমবার সকালে স্থলভাগের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর (APSDMA) জানিয়েছে, উপকূলজুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া। APSDMA-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রখর জৈন জানান, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিমি বেগে হাওয়া বইছে।’’

Advertisements

মোন্থার অবস্থান

রবিবার গভীর রাতে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ‘মোন্থা’-র জন্ম দেয়। সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ ঝড়টির অবস্থান ছিল বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব অংশে-চেন্নাই থেকে প্রায় ৪৮০ কিমি পূর্বে, কাকিনাডা থেকে ৫৩০ কিমি দক্ষিণ–দক্ষিণ–পূর্বে এবং বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ৫৬০ কিমি দক্ষিণে।

   

ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ কিমি গতিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং মঙ্গলবার সকালে তা ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ (Severe Cyclonic Storm) পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার সন্ধ্যা বা রাতে কাকিনাড়া উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঝড়টি। যদি তা ঘটে, তবে এই হবে চলতি বছরে ভারতের মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়া প্রথম ঘূর্ণিঝড়। এর আগে আরব সাগরে গঠিত ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ স্থলভাগে পৌঁছনোর আগেই দিক পরিবর্তন করেছিল।

একাধিক রাজ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস Cyclone Montha Kakinada Landfall

ঝড়ের প্রভাবে সতর্কতা জারি হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও ছত্তিশগড়ে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উপকূলীয় জেলাগুলিতে অতিভারী বৃষ্টি ও ঘণ্টায় ৭০–৯০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে।

ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।  মলকানগিরি, কোরাপুট, নবরংপুর, রায়গড়া, গজপতি, গঞ্জাম, কলাহাণ্ডি ও কান্ধমাল, এই আট জেলায় মোট ১২৮টি উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে কর্ণাটকের উপকূলবর্তী উত্তর কন্নড়, দক্ষিণ কন্নড় ও উদুপি জেলায় জারি হয়েছে অরেঞ্জ অ্যালার্ট। ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisements

কেরলে দুই জনের মৃত্যু 

কেরলে প্রবল বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ে জলমগ্ন হয়েছে বহু এলাকা। আলাপ্পুঝায় নৌকাডুবিতে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে, অন্যদিকে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন এরনাকুলামের এক বাসিন্দা। রাজ্যের পাঁচটি জেলায় জারি হয়েছে অরেঞ্জ অ্যালার্ট।

রেল পরিষেবা ব্যাহত

ঝড়ের সতর্কতায় ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে ও সাউথ সেন্ট্রাল রেলওয়ে ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাতিল করেছে একাধিক ট্রেন পরিষেবা। বাতিল ট্রেনের মধ্যে রয়েছে বিশাখাপত্তনম–তিরুপতি, বিশাখাপত্তনম–চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম–কিরানদুল ও বিশাখাপত্তনম–কোরাপুট রুটের একাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর আলোচনা

ঝড়ের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনে কথা বলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজ নেন ও সর্বতো সহায়তার আশ্বাস দেন।
নাইডু এক্স (X)-এ পোস্ট করে জানান, “প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন ও সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি সকল নাগরিককে সরকারি নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।”

রাজ্যজুড়ে সতর্কতা ও প্রস্তুতি

অন্ধ্রপ্রদেশ প্রশাসন ও স্থানীয় পুরসভাগুলিকে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। RTGS ও APSDMA–র মাধ্যমে ক্রমাগত সতর্কতা জারি হচ্ছে। উপকূলবর্তী ও নিম্নভূমি এলাকার বাসিন্দা, গর্ভবতী মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ত্রাণশিবিরে পর্যাপ্ত খাদ্য, দুধ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১৪,০০০ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। কাকিনাড়া, কোনাসীমা, পশ্চিম গোদাবরী, কৃষ্ণা, বাপটলা, প্রকাশম ও নেল্লোরে জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট। উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নামানো হয়েছে ১১টি এনডিআরএফ এবং ১২টি এসডিআরএফ দল।