বঙ্গোপসাগরের ওপর নতুন করে তৈরি হয়েছে এক নিম্নচাপ যা দ্রুত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ২৭ অক্টোবরের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (India Meteorological Department–IMD) জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘মান্থা’, (Cyclone Montha) যার অর্থ থাই ভাষায় “সুগন্ধি ফুল” বা “অলঙ্কারসজ্জিত সুন্দর ফুল”।
এই নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড, এবং এটি উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় নামকরণের আন্তর্জাতিক তালিকার অংশ। নামের সৌন্দর্যের বিপরীতে প্রকৃতিতে এর প্রভাব হবে ভয়ঙ্কর—বলছে আবহাওয়াবিদরা।
শুক্রবার আইএমডি জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম-কেন্দ্রীয় অংশে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যা ২৬ অক্টোবরের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে এবং ২৭ অক্টোবরের সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এই সময় উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্র উত্তাল থাকবে এবং বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০–৭০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে তামিলনাড়ু, পুদুচ্চেরি ও কারাইকালের জন্য। আগামী কয়েক দিন ধরে এই অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
২৬ অক্টোবর: তামিলনাড়ু, পুদুচ্চেরি ও কারাইকাল অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং এক-দু’টি জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি। চেন্নাই, কাঁচিপুরম, ত্রিভল্লুর, রাণিপেট ও ভিল্লুপুরম জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
২৭ অক্টোবর: একই এলাকায় বজ্রঝড়সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি। চেন্নাই ও আশেপাশের জেলা বিশেষভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
২৮ অক্টোবর: হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে, সঙ্গে দমকা হাওয়া।
২৯ অক্টোবর: বিচ্ছিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তবে তখনও উপকূলে সমুদ্রের অবস্থা বিপজ্জনক থাকবে।
আইএমডি জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবরের সন্ধ্যার মধ্যেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসতে হবে। ২৫ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলীয় সমুদ্রসীমায় প্রবল ঢেউ, বেগবান হাওয়া ও ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। তামিলনাড়ু উপকূল, গালফ অফ মান্নার এবং কোমোরিন এলাকায় নৌচলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শুধু বঙ্গোপসাগর নয়, আরব সাগরেও এক নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে যা গত ২৪ ঘণ্টায় ডিপ্রেশনে পরিণত হয়েছে। এটি গোয়ার পশ্চিমে ও মঙ্গালোরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছে। যদিও আপাতত সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে বলে মনে করছে না আবহাওয়া দফতর, তবে দুই দিক থেকেই ভারতের উপকূলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে জলাবদ্ধতা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং গাছ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের তরফে বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে উপকূল সংলগ্ন এলাকায়। পর্যটক এবং মৎস্যজীবীদের পরবর্তী পাঁচ দিন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ।
যদিও এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাবের সম্ভাবনা কম, তবু আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সিস্টেমটির গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। ফলে দক্ষিণবঙ্গে হালকা বৃষ্টি বা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখা যেতে পারে ২৮ – ২৯ অক্টোবর নাগাদ।


