ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় ওড়িশায় ৫০০০ এর বেশি ত্রাণকেন্দ্র প্রস্তুত, রাজ্যজুড়ে সতর্কতা

২৩ অক্টোবর ২০২৪: ঘূর্ণিঝড় দানা (Cyclone Dana) পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সাথে সাথে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে…

২৩ অক্টোবর ২০২৪: ঘূর্ণিঝড় দানা (Cyclone Dana) পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সাথে সাথে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের (IMD) পরিচালক মৃদুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার পুরি থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর ভূমিধস ২৫ অক্টোবর ভোরের দিকে পুরি ও সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী অঞ্চলে হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসের গতি ১০০-১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় হতে পারে, যা মাঝে মাঝে ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারে। ঝড়ের তীব্রতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনায়, উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।

ওড়িশায় প্রস্তুতি
ওড়িশা রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলায় ৮০০টি স্থায়ী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫০০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্কুল ও কলেজে স্থাপন করা হয়েছে। রাজ্যের রাজস্ব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সুরেশ পুজারি জানিয়েছেন, ২৫০টি ত্রাণকেন্দ্র পরিদর্শন করে সেগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য, জল, ওষুধ এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১৪টি জেলার সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।

পশ্চিমবঙ্গেও সতর্কতা
পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে রাজ্যের সাতটি জেলায় ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। নিম্নভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যাতে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া যায় এবং ঝড়ের ক্ষতি কমানো যায়।

কোস্ট গার্ডের তৎপরতা
ভারতীয় কোস্ট গার্ড তাদের প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে ঝড়ের কারণে কোনো জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কোস্ট গার্ডের জাহাজ এবং বিমানগুলি মোতায়েন করা হয়েছে এবং উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে মাছ ধরা ও সমুদ্রযাত্রার জন্য সতর্কতা প্রচার করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে লোকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চালানো হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থানান্তর
উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। বিশেষ করে ওড়িশার পুরি ও গোপালপুরের মতো অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় সেখানে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর এবং আশ্রয় প্রদান নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

Advertisements

অগ্রিম পদক্ষেপ
উভয় রাজ্যই পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া দুটোই আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি কোস্ট গার্ড নিয়মিতভাবে আবহাওয়ার সতর্কতা প্রদান করছে এবং স্থানীয় জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংকটের মোকাবেলা
ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং পানীয় জলের সরবরাহও নিশ্চিত করা হয়েছে। ওড়িশার সরকার প্রায় ৫০০০ ত্রাণকেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে, যেখানে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারি চালিত জেনারেটর ও বিকল্প শক্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সর্তকতা এবং সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মাইকিং করা হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ তাড়াতাড়ি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে পারে।

সার্বিক চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়
সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করছে যাতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আগামী দিনগুলোতে ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।