দুয়ারে দানা! শুক্রের ভোরেই ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়বে সাইক্লোন

প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতবর্ষে সাইক্লোনের ঘটনার হার বেড়েছে। এরই মধ্যে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়, ‘দানা’ (Cyclone Dana), আজ শুক্রবার সকালে…

Odisha and West Bengal Coast Cyclone Dana

প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতবর্ষে সাইক্লোনের ঘটনার হার বেড়েছে। এরই মধ্যে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়, ‘দানা’ (Cyclone Dana), আজ শুক্রবার সকালে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকালে পাড়িপের পাশে অবস্থিত প্যারাডীপ থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে, ধামরা থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং সাগর দ্বীপ থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বিপদ সংকেত এবং প্রস্তুতি
সাইক্লোন দানার কারণে ওড়িশার সাতটি জেলায় ‘রেড ওয়ার্নিং’ (অ্যাকশন নেওয়ার জন্য সতর্কতা) জারি করা হয়েছে। এই জেলাগুলো হল: ময়ূরভঞ্জ, কাটাক, জাজপুর, বালাসোর, ভদ্রক, কেন্দ্রেপারা এবং জগৎসিংহপুর। এর পাশাপাশি, পাঁচটি জেলায় ‘অরেঞ্জ ওয়ার্নিং’ (প্রস্তুতি নিতে হবে এমন সতর্কতা) জারি করা হয়েছে, যার মধ্যে পুরী, খুরদা, নায়াগড় এবং ঢেঙ্কানাল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

   

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মহন চারন মজী এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলেছেন যে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ৩-৪ লাখ লোক, বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। তবে, এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ
সাইক্লোন দানা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ১২ শতকের এই মন্দিরটি সাইক্লোনের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন তৎপরতা বাড়িয়েছে। পুরী জেলার কালেক্টর সিদ্ধার্থ এস স্বৈন জানিয়েছেন, ‘কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করেছে যে, মাসব্যাপী ‘কার্তিক ব্রতা’ পালন করা দর্শনার্থীরা যেন মন্দিরে না আসেন।’

জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বাহিনী (এনডিআরএফ) ওড়িশার মহাকালপদা এবং Kendrapara-এর মতো জেলাগুলোতে সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে। বাহিনীটি দরজায় দরজায় গিয়ে এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার করে মানুষকে সাইক্লোন দানার আসন্ন আক্রমণের বিষয়ে সচেতন করছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস
বৃহস্পতিবার সকালে ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাসের মুখোমুখি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে সাইক্লোন দানা দ্রুত গতিতে ওড়িশার উপকূলে এগিয়ে আসছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও বৃহস্পতিবার সকালে মাঝারি থেকে তীব্র বৃষ্টিপাত দেখা গেছে।

আইএমডির পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাইক্লোন দানা আজ রাতে ২৪ অক্টোবর শুরু হওয়া প্রক্রিয়ায় ভিটর্কনিকা জাতীয় উদ্যান এবং ধামরা পোর্টের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে। আইএমডির পরিচালক জেনারেল মরুত্যঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, ‘ল্যান্ডফলের সময় বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিমি/ঘণ্টায় পৌঁছাবে এবং প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো ঢেউ এই সাইক্লোন প্রভাব ফেলবে।’

বিপদ এবং প্রস্তুতির গুরুত্ব
সাইক্লোন দানা ওড়িশায় একটি বহু বিপদের পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং ২ মিটার পর্যন্ত জোয়ার উঠতে পারে। এটি মানুষের জীবন ও সম্পত্তির জন্য এক গভীর বিপদের কারণ হতে পারে। তাই, স্থানীয় প্রশাসন এবং এনডিআরএফের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইক্লোন দানার সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি অব্যাহত রাখতে হবে।

উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর অবস্থা
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইক্লোনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে এবং সেখানে শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলারগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় মানুষরা সাইক্লোন দানার আগমন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেকেই নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন, কিন্তু কিছু মানুষ এখনও বাড়িতে রয়েছেন। স্থানীয় নেতা এবং প্রশাসনের সদস্যরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা গণসংযোগ করে জনগণকে সাইক্লোন সম্পর্কে অবহিত করছেন এবং নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।

সাইক্লোন দানার আগমনকে কেন্দ্র করে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা এবং জনগণের সচেতনতা এই সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ। সবার উচিত সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করা।