চোখ রাঙাচ্ছে এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, যার শক্তি এবং গতি দেখে আতঙ্কিত অস্ট্রেলিয়া। গত ৫০ বছরে এমন ভয়াবহ ঝড়গুলির মধ্যে এটি অন্যতম হতে চলেছে। ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড তীব্র গতিতে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে এগিয়ে আসছে এবং তার প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। আবহবিদরা মনে করছেন, এই ঘূর্ণিঝড় গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বিপজ্জনক হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড ক্যাটাগরি ১ এর ঘূর্ণিঝড়, যা একটিই খুব শক্তিশালী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের মতো। এর গতি এতই তীব্র যে, এটি যদি শক্তি সঞ্চয় করে ল্যান্ডফল করে, তাহলে একসঙ্গে ২৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত, ব্রিসবেন শহর এবং এর আশপাশের অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী ২৫ লক্ষ মানুষের জন্য এই ঝড় হতে পারে মারাত্মক। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার রাতে বা শনিবার ভোরে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বুধবার (৭ মার্চ) সকাল পর্যন্ত, ঘূর্ণিঝড়টি ব্রিসবেন থেকে প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থান করছে এবং ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে পশ্চিমে এগিয়ে যাচ্ছে। ঝড়ের অবস্থা এখনো অনেক দূরে, কিন্তু তীব্র বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাত ইতিমধ্যে এলাকাটির বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত করেছে। কুইন্সল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলসে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টারও বেশি গতিতে বাতাস বইছে এবং ঘূর্ণিঝড়ের আগমনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
গোল্ড কোস্ট এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রায় ৮২,০০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং ব্রিসবেন বিমানবন্দরেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহরের গণপরিবহনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং একাধিক স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সতর্ক থাকার এবং নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। গোল্ড কোস্ট সিটি কাউন্সিল ঘোষণা করেছে, সমুদ্রের জলের ধারেপাশে গেলে ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে, যা প্রায় ৮.৭১ লক্ষ টাকা।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে বারবার সতর্ক করছে এবং তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই টানা বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাসের কারণে সংকেত দেওয়া হয়েছে, যাতে স্থানীয়রা সময়মতো প্রস্তুত থাকতে পারে এবং বিপদের সম্মুখীন না হয়। আরও বলা হচ্ছে, সমুদ্র উপকূলে যেসব মানুষ বসবাস করেন, তাদেরকে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
তবে, ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেডের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এটি যখন স্থলভাগে আঘাত করবে, তখন তার শক্তি কতটা কমবে এবং সেটি কিভাবে মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করবে সময়ের ওপর। এই ঝড়ের কারণে ব্যাপক ধ্বংসলীলা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে, তবে সরকারি কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করেছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো মানুষের সতর্ক থাকা এবং সম্ভাব্য বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করা।