HomeBharatপাহাড়চূড়ায় নিরাপত্তার বলয়, মাওবাদী দমনে CRPF-এর নতুন ক্যাম্প

পাহাড়চূড়ায় নিরাপত্তার বলয়, মাওবাদী দমনে CRPF-এর নতুন ক্যাম্প

- Advertisement -

ছত্তিসগড়ের সুকমা জেলার গোগুণ্ডা—বহু বছর ধরে মাওবাদী দাপটে ত্রস্ত একটি দুর্গম অঞ্চল। জঙ্গলবেষ্টিত পাহাড়, অগম্য পথ, কঠিন ভূগোল আর উন্নয়নের আলো থেকে বহু দূরে থাকা এই এলাকাকে দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়ে এসেছে। এমনই এক স্থানে প্রথমবারের জন্য পা রাখল কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (CRPF)। পাহাড়চূড়ায় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে নতুন এক নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়েছে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে—যা গ্রামবাসীদের কাছে আশার আলো নিয়ে এসেছে।

গোগুণ্ডা এলাকায় এতদিন কোনও রাস্তা ছিল না। কাঁচা পথ তো দূর, পায়ে হাঁটার মতো উপযুক্ত পথও ছিল না এখানকার মানুষের জন্য। জঙ্গল আর ঘন পাহাড়ি পথের মধ্য দিয়ে চলাফেরা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বহু গ্রামবাসী নানা সময়ে মাওবাদীদের ভয়ে স্বাভাবিক জীবনের ওপর নানারকম বিধিনিষেধ মেনে চলতে বাধ্য হতেন। এমন পরিস্থিতিতে এই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী পৌঁছনো কার্যত অসম্ভবের কাছাকাছি ছিল। ফলে গোগুণ্ডার বিশাল অংশ বছরের পর বছর আধা-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। কিন্তু প্রথমবারের মতো এই দুর্গম পাহাড়চূড়ায় CRPF ক্যাম্প বসানো—এই পরিস্থিতিতে একটি বড় মোড় ঘোরানোর মতো পদক্ষেপ। যদিও এলাকা পৌঁছনোর পথ এখনও সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি, তবুও বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই CRPF জওয়ানরা পাহাড়শীর্ষে ক্যাম্প করতে সক্ষম হয়েছেন। ক্যাম্প স্থাপনের ফলে এই অঞ্চলের নজরদারি, টহলদারি এবং মাওবাদী আন্দোলন প্রতিরোধ অনেকটাই সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

   

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন—এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত থাকলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবন অনেক বেশি স্বাভাবিক ও নিরাপদ হবে। এতদিন গ্রামবাসীদের চলাফেরা, কৃষিকাজ বা জঙ্গলে গিয়ে ফল-জ্বালানি সংগ্রহ করা সবই ঝুঁকির ছিল। অনেক সময়ই তাঁরা আশঙ্কা করতেন, কোথাও বিস্ফোরক পাতা রয়েছে কি না, অথবা পথের ধারে মাওবাদীদের নজরদারি আছে কি না। ফলে কাজকর্ম করতে গেলে একধরনের মানসিক চাপ সবসময়ই ছিল। CRPF ক্যাম্প বসায় অন্তত সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

এই পদক্ষেপের ফলে গ্রামবাসীদের কাছে সবচেয়ে বড় সুবিধা হতে পারে সামাজিক নিরাপত্তা। অনেকেই বলেন, এতদিন সন্ধ্যার পর গ্রাম থেকে বাইরে বেরোনোয় ছিল নিষেধের মতো। কিন্তু এখন নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সেই ভয় অনেকটাই কাটাবে। এছাড়া যে সমস্ত গ্রাম এতদিন প্রশাসনের অধীনে থেকেও কার্যত উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে দূরে ছিল—তাদের কাছে সুযোগ বাড়বে রাস্তা, চিকিৎসা, পানীয় জল, শিক্ষার মতো মৌলিক পরিষেবা পাওয়ার।

CRPF ক্যাম্প স্থাপন মানেই এখানে এখন নিয়মিত টহল হবে। পাহাড়চূড়া থেকে বেশ বড় এলাকা নজরদারির মধ্যে রাখা যাবে। চূড়ার অবস্থানগত সুবিধায় জওয়ানরা আশপাশের গতিবিধিও সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। মাওবাদী দলগুলির জন্যও তাই এই এলাকাকে আগের মতো ব্যবহার করা কঠিন হয়ে উঠবে।

এলাকার বাসিন্দাদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী আসার ফলে তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ আরও মজবুত হবে। এতদিন যিনি শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসা সুবিধা পেতেন না, যিনি বাজারে যেতে বা স্কুলে পাঠাতে ভয় পেতেন—তাঁদের জীবনে বদল আসবে। যারা নিজেদের জমিতে কাজ করতে পারতেন না, তাঁদের কাজকর্ম সহজ হবে।

 

 

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular