এবার খোদ যোগী রাজ্যে মার খেলেন সিআরপিএফ জওয়ান (crpf-jawan)। উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর রেলস্টেশনে ঘটে এই লজ্জাজনক ঘটনা। কানওয়ার যাত্রীদের একটি দল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর একজন জওয়ানেকে নির্মম ভাবে মারধর করে। এই ঘটনাটি স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।
নরেন্দ্র মোদীর শাসনে, উত্তর প্রদেশের মির্জাপুরের একটি রেলস্টেশনে একজন সিআরপিএফ জওয়ানকে আজ নির্মমভাবে আক্রমণ করে কানওয়ারিয়ারা। গত কয়েক বছর ধরে, বিজেপির অনুপ্রেরণায় কানওয়ারিয়ারা পুরো উত্তর ভারত জুড়ে বছরের এই সময়ে তাণ্ডব চালায়।
pic.twitter.com/5SSXYkSdQ8— Sandipan Mitra (@SMitra_) July 19, 2025
এই হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টিকিট কাটা নিয়ে নিয়ে কানওয়ার যাত্রীদের সঙ্গে জওয়ানের তর্ক বাধে, যা পরে হাতাহাতিতে বদলে যায়। এই ঘটনায় সাতজন কানওয়ার যাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভগবা পোশাক পরা কানওয়ার যাত্রীরা সিআরপিএফ জওয়ান গৌতমকে মাটিতে ফেলে লাথি ও ঘুসি মেরে আক্রমণ করছে। এই আক্রান্ত জওয়ান মণিপুরে তাঁর ডিউটিতে যোগ দেওয়ার জন্য ব্রহ্মপুত্র মেল ধরতে মির্জাপুর স্টেশনে এসেছিলেন। ঘটনার সময় বহু মানুষ উপস্থিত থাকলেও, কেউই এই নির্মম হামলা থামানোর জন্য এগিয়ে আসেননি।
পরে একজন যাত্রী হামলাকারীদের একজনকে টেনে সরানোর চেষ্টা করেন। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “একজন সৈনিক, যিনি দেশের জন্য জীবন দেন, তাঁকে এভাবে আক্রমণ করা লজ্জাজনক। এটি আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভাঙনের প্রমাণ।”
আরপিএফ-এর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর চমন সিং তোমার জানিয়েছেন, “সিআরপিএফ জওয়ানকে মারধরের ঘটনায় সাতজন কানওয়ার যাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, তদন্তের পর এই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিছু সূত্রে জানা গেছে, তিনজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, এবং চারজন নাবালক হওয়ায় তাদের চাইল্ড লাইনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে গ্রেপ্তারকৃত সাতজনকেই জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে আরও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনা উত্তর প্রদেশে কানওয়ার যাত্রার সময় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সমালোচকরা দাবি করছেন যে বিজেপি শাসিত রাজ্যে কানওয়ার যাত্রার সময় কিছু যাত্রীর মধ্যে আইনের প্রতি অবজ্ঞা এবং হিংসামূলক প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নরেন্দ্র মোদীর শাসনে, কানওয়ার যাত্রীরা উত্তর ভারত জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে।
এই ঘটনা বিজেপির উৎসাহে এই ধরনের আচরণ বাড়ছে বলে প্রমাণ করে।” তবে, এই ধরনের দাবি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং তথ্যের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।কানওয়ার যাত্রা, যা শ্রাবণ মাসে ভগবান শিবের ভক্তদের তীর্থযাত্রা হিসেবে পালিত হয়, ১১ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত চলছে।
এই সময়ে উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কানওয়ার যাত্রীদের ভিড় বাড়ে, এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে, এই ঘটনা এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ঘটনাগুলি, যেমন গাজিয়াবাদে হিন্দু রক্ষা দলের অ-শাকাহারী খাবার বিক্রির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং নাগরিক সংগঠনগুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে। সিআরপিএফ জওয়ান গৌতম, যিনি মির্জাপুরের খিতহা মউনা গ্রামের বাসিন্দা, তাঁর পরিবার এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘটনা গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকে এই ঘটনাকে দেশের সৈনিকদের প্রতি অসম্মান হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও তীব্র হয়েছে। বিরোধী দলগুলি যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারের সমালোচনা করে বলেছে যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তারা দাবি করছে, বিজেপি সরকারের উৎসাহে কিছু গোষ্ঠী আইনের উপরে নিজেদের মনে করছে।
বর্ষার তাণ্ডবে মৃত্যু ১৮, একাধিক রাজ্যে জারি রেড অ্যালার্ট
অন্যদিকে, পুলিশ এবং প্রশাসন জানিয়েছে যে তারা ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এই ঘটনা কানওয়ার যাত্রার সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক সম্প্রীতির গুরুত্ব তুলে ধরেছে। সরকার ও প্রশাসনের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং দেশের সৈনিকদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।