নয়াদিল্লি: কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) নিয়ে ফের নিরাপত্তা বিতর্ক তৈরি হল। কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ভিআইপি নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুনীল জুন একটি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, রাহুল গান্ধী বিদেশ সফরের সময় বারবার নিরাপত্তা প্রোটোকল ভঙ্গ করছেন। বুধবার লেখা এই চিঠিটি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও পাঠানো হয়েছে।
সিআরপিএফ জানিয়েছে, রাহুল গান্ধী বিদেশে ভ্রমণ করলেও প্রায়শই কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছেন না। এর ফলে ‘ইয়েলো বুক’-এ বর্ণিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ হচ্ছে। চিঠিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর একাধিক বিদেশ সফরের কথা— ইটালি (৩০ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি), ভিয়েতনাম (১২ থেকে ১৭ মার্চ), দুবাই (১৭ থেকে ২৩ এপ্রিল), কাতার (১১ থেকে ১৮ জুন), লন্ডন (২৫ জুন থেকে ৬ জুলাই) এবং মালয়েশিয়া (৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর)।
রাহুল গান্ধী বর্তমানে জেড প্লাস (Z+) ক্যাটাগরির নিরাপত্তার আওতায় আছেন, যা দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ সুরক্ষা। এই সুরক্ষায় প্রায় ৫৫ জন কর্মী নিযুক্ত থাকেন, যাঁদের মধ্যে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG) কমান্ডোও থাকেন। এর অন্তর্ভুক্ত অ্যাডভান্সড সিকিউরিটি লিয়াজঁ (ASL), যেখানে ভিআইপি-র সফরের আগে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এলাকায় আগাম পরিদর্শন করা হয়।
তবে অভিযোগ, রাহুল গান্ধী প্রয়োজনীয় তথ্য না দেওয়ায় সিআরপিএফ-এর এই প্রস্তুতি কার্যত ব্যাহত হচ্ছে। এটা প্রথম ঘটনা নয়। ২০২২ সালেও সিআরপিএফ দাবি করেছিল, ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত অন্তত ১১৩ বার তিনি নিরাপত্তা নির্দেশ মানেননি। দিল্লিতে ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ও অনুরূপ অভিযোগ উঠেছিল।
২০২৩ সালে কাশ্মীরে ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ও রাহুল গান্ধী নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েন বলে দাবি করে কংগ্রেস। তাঁকে ঘিরে হঠাৎ ভিড় জমে যাওয়ায় তিনি প্রায় আধঘণ্টা আটকে ছিলেন। কংগ্রেস তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে অভিযোগ করে, নিরাপত্তায় ফাঁকফোকর রয়েছে।
সম্প্রতি বিহারে ভোটার অধিকারের যাত্রায় অংশ নেওয়ার সময়ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হয়। একটি বাইকে চড়ে যাত্রা করার সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে চুম্বন করে। এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালে প্রায় তিন দশক পর গান্ধী পরিবারের বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী (SPG) কভার সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর থেকে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সিআরপিএফ। যদিও কংগ্রেসের দাবি, একাধিকবার তাঁদের নেতা নিরাপত্তার ঘাটতির শিকার হয়েছেন।
তবে এবারও রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে কিংবা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বারবার এই ধরনের নিরাপত্তা বিতর্ক কেবল রাহুল গান্ধীর ব্যক্তিগত ঝুঁকিই বাড়াচ্ছে না, পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপও তৈরি করছে।