ভুবনেশ্বরে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব

ভুবনেশ্বরে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য আবারও সরব সিপিআই(এম) নেতৃত্ব (Migrant Workers)। এই বিষয়ে বাম নেতৃত্ব কিছু দাবিও তুলে ধরেছে । সিপিআই(এম)-এর নেতারা…

Migrant Workers

ভুবনেশ্বরে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য আবারও সরব সিপিআই(এম) নেতৃত্ব (Migrant Workers)। এই বিষয়ে বাম নেতৃত্ব কিছু দাবিও তুলে ধরেছে । সিপিআই(এম)-এর নেতারা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ইন্টারস্টেট জব কার্ড, হেলথ কার্ড এবং আইডি কার্ডের দাবি জানিয়েছেন।

তারা অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাব এবং তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের শিল্পবিরোধী নীতির কারণে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি শ্রমিকদের হয়রানি ও অবিচারের শিকার হতে হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সিপিআই(এম) তিনটি জরুরি দাবি উত্থাপন করেছে।

   

সিপিআই(এম) নেতারা বলেছে , “বিজেপি সরকার বারবার বলছে ‘এক দেশ, এক আইন’। তাহলে কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি অভিন্ন জব কার্ড চালু করা হচ্ছে না? সমস্ত রাজ্যে বৈধ এমন একটি জব কার্ড প্রয়োজন, যা শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।” তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ২২.৫ লক্ষ শ্রমিক দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নির্মাণ, ইটভাটা, কারখানা ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন।

এই শ্রমিকরা প্রায়ই ন্যূনতম মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও অন্যান্য শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। একটি ইন্টারস্টেট জব কার্ড এই শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। সিপিআই(এম) নেতারা আরও দাবি করেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি ইন্টারস্টেট হেলথ কার্ড চালু করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ হেলথ কার্ড চালু করেছেন।

তবে, সিপিআই(এম) নেতারা বলছেন, এই কার্ড শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য, যা অন্য রাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য কোনও সুবিধা দেয় না। তারা আরো বলেছে “মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের ফিরে আসার জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের কথা বলছেন।

কিন্তু শ্রমিকরা কেন অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন? তৃণমূলের শিল্পবিরোধী নীতি ও সিন্ডিকেটরাজের জন্য রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাব। তাই একটি ইন্টারস্টেট হেলথ কার্ড চালু করা প্রয়োজন, যাতে শ্রমিকরা যে রাজ্যে কাজ করছেন, সেখানেই চিকিৎসা সুবিধা পান।”

সিপিআই(এম) নেতারা আরও দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এমন একটি আইডি কার্ড প্রদান করা, যা তাদের বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে হয়রানি থেকে রক্ষা করবে। সম্প্রতি ওড়িশার ঝাড়সুগুড়ায় ৪৪ জন বাঙালি শ্রমিককে আটক করা হয়েছিল, যদিও তারা ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র জমা দিয়েছিলেন।

এই ঘটনায় সিপিআই(এম) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। নেতারা বলেন, “বাঙালি শ্রমিকদের শুধুমাত্র ভাষার কারণে বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা বলে অপমান করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উচিত একটি সরকারি আইডি কার্ড প্রদান করা, যা শ্রমিকদের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হবে।”

Advertisements

তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাইপোকে বাঁচাতে বছরে তিনবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ছুটে যান, কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কেন কোনও পদক্ষেপ নেন না?”

সিপিআই(এম) নেতারা অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল সরকারের শিল্পবিরোধী নীতি এবং সিন্ডিকেটরাজের কারণে পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গ উত্তর প্রদেশ, বিহার ও রাজস্থানের পরে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম পরিযায়ী শ্রমিক প্রেরণকারী রাজ্য।

প্রায় ৫.৮ লক্ষ মানুষ ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে রাজ্য থেকে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন। সিপিআই(এম) নেতারা বলছেন, রাজ্যে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে দরিদ্র ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষ, বিশেষ করে মুসলিম, তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা, জীবিকার জন্য অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

তাই এই বিষয়ে সরকারের চিন্তা ভাবনা করা একান্ত প্রয়োজন। কমিউনিস্টরা দাবি করেছে যে মমতা সরকার ভোটের আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ভীষণ চিন্তিত কিন্তু আদতে এই সরকারের দুর্নীতির কারণেই বাংলার যুবকরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে।

বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, মৃত ২

একদিন যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন বাংলায় ঢুকতে দেননি করোনা এক্সপ্রেস নাম দিয়ে আজ রাজনৈতিক স্বার্থ কায়েম করার জন্য তাদের রাজ্যে ডেকে নিতে চাইছেন।