নয়াদিল্লি: লাল করিডরজুড়ে তীব্রতর হচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ অপারেশন। গত কয়েক মাসে বহু শীর্ষ মাওবাদী নেতা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে, শতাধিক ক্যাডার আত্মসমর্পণ করেছে এবং গোটা অঞ্চলে নজিরবিহীন নিরাপত্তা চাঁদনি। এই উত্তেজনার মধ্যেই বড় ধরনের মোড় নিয়েছে মাওবাদী আন্দোলন। কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী) তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখে জানিয়েছে তারা আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত।
চিঠিতে মাওবাদী সংগঠন দাবি করেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পেলে তারা ধাপে ধাপে সমস্ত ক্যাডারকে আত্মসমর্পণের আওতায় আনতে পারে। তাদের ভাষায়, “দেশ ও বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে অস্ত্র-সংগ্রাম থেকে সরে এসে পুনর্বাসন পরিকল্পনার আওতায় নতুন পথ গ্রহণ করাই বাস্তবসম্মত।”
ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দিল INS মাহে, জলের নিচের প্রতিটি হুমকিকে করবে ধ্বংস
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “আমরা হাটিয়া ছাড়তে চাই এবং সরকারের পুনর্বাসন ও পুনর্মার্গন পরিকল্পনা অনুযায়ী সাধারণ জীবনে ফিরতে চাই। কিন্তু আমাদের নিজেদের সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুযায়ী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত পৌঁছে দিতে সময় প্রয়োজন। তাই আমরা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত সময় চাইছি।”
মাওবাদী নেতৃত্ব অনুরোধ জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে যেন সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। চিঠিতে লেখা হয়েছে, “আমাদের আবেদনটির পেছনে কোনও গোপন উদ্দেশ্য নেই। আমরা সত্যিই অস্ত্র ত্যাগ করে মূলধারায় ফিরতে চাই। তাই উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণ অবস্থানই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।”
চিঠিতে আরও দাবি করা হয়েছে, মহারাষ্ট্র–মধ্যপ্রদেশ–ছত্তিশগড় স্পেশাল জোনাল কমিটির মুখপাত্র সংগঠনের সক্রিয় সদস্যদের সমস্ত কার্যকলাপ আপাতত থামিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংগঠনের অনুরোধ, সরকারি পক্ষ যেন কয়েকদিন রেডিওতে বিশেষ বার্তা প্রচার করে, যাতে দূরবর্তী জঙ্গলে থাকা ক্যাডাররাও আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার গত মার্চে ঘোষণা করেছে ২০২৬ সালের মধ্যেই ভারত থেকে মাওবাদী সশস্ত্র আন্দোলন সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে। সেই লক্ষ্যেই গত কয়েক মাসে যৌথ অভিযান ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়েছে। এতে যেমন বহু মাওবাদী নেতা নিহত হয়েছে, তেমনই বহু জঙ্গলঘেরা অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান শক্তিশালী করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্যাডার সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সোপর্দ হয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলনের জন্য বড় ধাক্কা আসে সম্প্রতি মাদভি হিদমার মৃত্যুতে। ছত্তিশগড়–তেলেঙ্গানা–অন্ধ্র প্রদেশের ত্রিসীমান্তের বনাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ সংঘর্ষে হিদমা নিহত হয়। হিদমা শুধু সংগঠনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারই নন, বহু বড় নাশকতার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের সংঘর্ষ, ক্যাডারদের মধ্যে ক্লান্তি, নেতৃত্বের ক্ষয়, প্রযুক্তিনির্ভর অভিযানের চাপ এবং সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজ সমষ্টিগতভাবে মাওবাদী সংগঠনকে বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একাংশ সতর্ক করে বলছেন চিঠিতে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করা হলেও বাস্তবে পরিকল্পনাটি কতটা নির্ভরযোগ্য ও আন্তরিক, তা সময়ই বলে দেবে।
এখন নজর তিন রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে সরকার কি অভিযানে শিথিলতা আনবে, নাকি কঠোর অবস্থান বজায় রেখে এগোবে? একই সময়ে প্রশ্ন থেকে গেছে এটি কি সত্যিই মাওবাদী আন্দোলনের শেষ অধ্যায়, নাকি পরবর্তী কৌশলের অংশ?
