জঙ্গলে পুড়ে ছাই বাসভরাজ, পরবর্তী মাওবাদী প্রধান মাধবী?

সরকারের প্রত্যাঘাতে কোমর ভেঙে যাওয়া মাওবাদী (CPI Maoist) সংগঠনের প্রধান কে হচ্ছেন? মাওবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক গেরিলা…

CPI Maoist Faces Leadership Vacuum After Basavaraju's Death

সরকারের প্রত্যাঘাতে কোমর ভেঙে যাওয়া মাওবাদী (CPI Maoist) সংগঠনের প্রধান কে হচ্ছেন? মাওবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক গেরিলা রণকুশলীকেই বেছে নেওয়া হবে। তাত্ত্বিক জ্ঞানী নেতার থেকেও এখন আত্মরক্ষা ও পরবর্তী কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া অগ্রাধিকার পাচ্ছে। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বাসভরাজের অবস্থান চিহ্নিত করে দিয়েছিল দলেরই কয়েকজন ‘বিশ্বাসঘাতক’।

সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের শীর্ষ কমান্ডার তথা সাধারন সম্পাদক বাসভরাজ সহ ২৮জনের মৃত্যু হয়গত ২১শে মার্চ। দলটির তরফে দাবি করা হয় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মৃত্যু হয় বাসবরাজের। দলটির দণ্ড্যকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির মুখপাত্র বিকল্প জানিয়েছেন, ”অবুঝমাড অঞ্চলের গুন্ডেকোট জঙ্গলে ৭২ ঘন্টা ব্যাপি যুদ্ধের পর সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারন সম্পাদক শহীদ হন”।

   

নিহত বাসভরাজের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতা ঘটানো ও হত্যা সংঘটিত করার অভিযোগ ছিল। মোস্ট ওয়ান্টেড এই মাওবাদী নেতাকে খতম করার দাবি করে কেন্দ্র সরকার। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা,ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে আছে মাওবাদী নেটওয়ার্ক।

মাওবাদী সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা কিষেনজির নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়। কিষেনজি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়কে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আর মমতা জমানা শুরুর পরেই যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজির মৃত্যু হয়। এবার মাওবাদী সংগঠনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বাসবসরাজকে যৌথ বাহিনী খতম করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে এবার ভারতের মাওবাদী প্রধান কে?
মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে মাদভি হিদমা-কে এমনই সংবাদ দিচ্ছে ডেকান ক্রনিকল। দক্ষিণ ভারতের এই ইংরাজি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ছত্তিশগড়ে এক সংঘর্ষে নাম্বালা কেশব ওরফে বাসভরাজের মৃত্যুর পর মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বকনিষিঠ সদস্য মাধবী হিদমাকে দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে।৪৫ বছর বয়সী মাদভি হিদমা। তিনি ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার বাসিন্দা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। তবে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুশীলন করেন। ছত্তিসগড় পুলিশ জানাচ্ছে, মাধবী হিদমা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর কমপক্ষে ২৬টি হামলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

জঙ্গলে ছাই বাসভরাজ
একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে মাওবাদী ঘনিষ্ঠ কিছু সামাজিক মাধ্যম গ্রুপ। এতে দাবি করা হয়েছে, নিহত বাসভরাজের দেহ তার আত্নীয়দের কাছে না পাঠিয়ে জঙ্গলেই পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

CPI Maoist Faces Leadership Vacuum After Basavaraju's Death
বাসভরাজের দেহ পোড়ানোর দৃশ্য

সংক্ষেপে সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের ইতিহাস:
সিপিআই (মাওবাদী) ভারতের একটি চরম বামপন্থী বা মাওবাদী বিদ্রোহী গেরিলা সংগঠন, যা “নকশাল” আন্দোলনের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত। এর মূল উদ্দেশ্য হল ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা।
১. নকশালবাড়ি আন্দোলনের সূত্রপাত (১৯৬৭):
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি গ্রামে কৃষকদের একটি বিদ্রোহ শুরু হয়। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার, কানু সান্যাল এবং জঙ্গল সান্যাল। এই আন্দোলন থেকেই “নকশাল” শব্দটির উৎপত্তি।

Advertisements

২. CPI(ML) গঠিত হয় (১৯৬৯):
চারু মজুমদার ও তার অনুগামীরা ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (CPI) ও CPIM থেকে আলাদা হয়ে একটি নতুন দল গঠন করেন — CPI (Marxist–Leninist)।

৩. দল ভাঙন ও বিকেন্দ্রীকরণ (১৯৭০–৯০-এর দশক):
চারু মজুমদারের মৃত্যুর (১৯৭২) পর দলটি বহু অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। অনেকগুলি আঞ্চলিক চরম বামপন্থী সংগঠন গঠিত হয়, যেমন: People’s War Group (PWG), Maoist Communist Centre (MCC) ইত্যাদি।

৪. মাওবাদী দল গঠন (২০০৪):
People’s War Group (PWG) ও Maoist Communist Centre of India (MCCI) ২০০৪ সালে একত্রিত হয়ে গঠন করে মাওবাদী দল। নেতৃত্বে ছিলেন গণপতি (Muppala Lakshmana Rao)।

৫. লক্ষ্য ও কার্যক্রম:
সিপিআই (মাওবাদী) একটি দীর্ঘস্থায়ী “জনযুদ্ধ” বা “People’s War” এর মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্র কাঠামো উচ্ছেদ করে কমিউনিস্ট শাসন কায়েম করতে চায়।সংগঠনটি সাধারণত জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল—যেমন ছত্তিশগড়, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতিতে সক্রিয়। একে “নকশালবাদী বিদ্রোহ” (Naxalite–Maoist insurgency) নামে ডাকা হয়।

৬. ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া:
ভারত সরকার সিপিআই (মাওবাদী)-কে আতঙ্কবাদী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করেছে (২০০৯ সালে) এবং দমন অভিযান শুরু করেছে — যেমন “অপারেশন গ্রিন হান্ট”। নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে বহু সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়েছে।

৭. বর্তমান অবস্থা:
যদিও ২০১০ সালের পর থেকে মাওবাদীদের প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, এখনও তারা কিছু অঞ্চলে সক্রিয় এবং নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে গণ্য হয়।