সুদর্শন রেড্ডিকে হারিয়ে ভারতের ১৫তম উপরাষ্ট্রপতি সিপি রাধাকৃষ্ণন

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (CP Radhakrishnan)-এর প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন মঙ্গলবার দেশের ১৫তম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। এনডিএ সমর্থিত রাধাকৃষ্ণন বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী বিচারপতি বি সুদর্শন…

CP Radhakrishnan

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (CP Radhakrishnan)-এর প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন মঙ্গলবার দেশের ১৫তম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। এনডিএ সমর্থিত রাধাকৃষ্ণন বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডিকে ১৫২ ভোটে পরাজিত করেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল উল্লেখযোগ্য—মোট ৯৮.২০ শতাংশ।

রাজ্যসভার সচিব পি সি মোডি সাংবাদিক বৈঠকে জানান, “এনডিএ মনোনীত এবং মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণন ৪৫২টি প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন। তিনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে, বিরোধী প্রার্থী বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডি ৩০০টি প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন।” এই নির্বাচনে ১৫টি ভোট অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

   

মোট ৭৮৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৭৬৭ জন ভোট দিয়েছেন। ১৩ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। এর মধ্যে ছিলেন বিজু জনতা দলের ৭ জন সাংসদ, ভারত রাষ্ট্র সমিতির ৪ জন সাংসদ, শিরোমণি অকালি দলের এক সাংসদ এবং একজন নির্দল সাংসদ। 

নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা ভোট প্রদান করেন। উপরাষ্ট্রপতির আসনটি ২১ জুলাই, ২০২৫ থেকে খালি ছিল। তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।

চন্দ্রপুরম পন্নুসামি রাধাকৃষ্ণন ১৯৫৭ সালের ২০ অক্টোবর তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তরুণ বয়সেই রাজনীতিতে যোগ দেন—প্রথমে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এ যুক্ত হন এবং পরে ১৯৭৪ সালে ভারতীয় জনসংঘের রাজ্য কমিটির সদস্য হন।

১৯৯৬ সালে রাধাকৃষ্ণনকে বিজেপির তামিলনাড়ু রাজ্য সম্পাদক করা হয়। এর দু’বছর পর, ১৯৯৮ সালে তিনি কোয়েম্বাটুর থেকে লোকসভা নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালেও পুনর্নির্বাচিত হন। সাংসদ থাকার সময় তিনি সংসদের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস কমিটির সদস্য এবং অর্থ মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জ কেলেঙ্কারি তদন্তে সংসদীয় বিশেষ কমিটির সদস্য ছিলেন।

২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপির তামিলনাড়ু রাজ্য সভাপতি ছিলেন। সেই সময়ে তিনি ১৯ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ‘রথযাত্রা’ নেতৃত্ব দেন, যা টানা ৯৩ দিন স্থায়ী হয়। এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য ছিল—সকল ভারতীয় নদীকে সংযুক্ত করার দাবি তোলা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োগ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং মাদকবিরোধী প্রচার চালানো।

Advertisements

রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি একাধিক রাজ্যে রাজ্যপালের পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন তিনি। সেই সময়ে কয়েক মাসের জন্য তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল ও পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অতিরিক্ত দায়িত্বও সামলান। ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই থেকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি, যা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএর প্রার্থী ঘোষণার আগে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

রাধাকৃষ্ণন ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কেরলের কোচির কয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের কয়ার শিল্পে রপ্তানি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল—২৫৩২ কোটি টাকা। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি কেরলে বিজেপির সর্বভারতীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।
রাজনীতির বাইরে খেলাধুলার প্রতিও তাঁর আগ্রহ বিশেষ।

কলেজ জীবনে তিনি টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। এছাড়া ক্রিকেট ও ভলিবলেও সমান আগ্রহ ছিল তাঁর। রাজনীতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি বহুদেশ সফর করেছেন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও জাপান সহ একাধিক দেশে তিনি সফর করেছেন।

বাবার সম্পত্তির ভাগ নিতে মামলা দায়ের করিশ্মা সন্তানের

সিপি রাধাকৃষ্ণনের দীর্ঘ রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে পৌঁছে দিল। রাষ্ট্রপতির পরেই উপরাষ্ট্রপতির পদ। এবার তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। এনডিএ প্রার্থী হিসেবে তাঁর এই জয় শুধু সংখ্যার জয় নয়, বরং তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক কর্মজীবনেরও স্বীকৃতি।