করোনার (COVID) সংক্রমণ ফের নিয়ন্ত্রণে। গত কয়েক সপ্তাহে দেশজুড়ে লাগাতার কমছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলা-সহ দেশের বহু রাজ্যেই অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের হার এবং হাসপাতালে ভর্তির চিত্র বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ কোভিড ড্যাশবোর্ড বলছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ জন করে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা কমছে। গত বৃহস্পতিবারের হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৮ জন অ্যাক্টিভ কোভিড রোগীর সংখ্যা কমেছে। যেখানে সপ্তাহ দুয়েক আগে গোটা দেশে অ্যাক্টিভ কেস ছিল প্রায় ৭৫০০-এর কাছাকাছি, বর্তমানে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৬০৮ জন।
কেরালা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক— করোনা যে রাজ্যগুলিতে এ বছর তুলনামূলক বেশি প্রভাব ফেলেছিল, সেখানে এখন সংক্রমণের হার স্পষ্টতই নিম্নমুখী। কেরালায় একদিনে ১২৫ জন রোগী কমেছে, এখন সেখানে অ্যাক্টিভ কেস মাত্র ১১৮৪। এক সপ্তাহ আগেও সংখ্যাটি ছিল ২০০০-এর কাছাকাছি।
পশ্চিমবঙ্গে করোনার নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু, দুইই অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এ নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু না জানালেও, কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পরিসংখ্যান আশার বার্তা দিচ্ছে।
এসএসকেএম, আরজি কর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতালগুলিতে বর্তমানে কোভিড পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যা হাতে গোনা। গত তিন–চার দিনে সরকারি হাসপাতালে কলকাতা ও মালদা মিলিয়ে মাত্র ৭ জন পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। তবে আশার কথা, কাউকেই ভর্তি করতে হয়নি।
ঢাকুরিয়া মণিপাল হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ ডা. অর্পিতা ভক্ত জানান, ‘‘দু’ সপ্তাহ আগে গড়ে দৈনিক ১২টি নমুনা পরীক্ষা হতো। এখন সেই সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫-এর কাছাকাছি। তার মধ্যে ১টি পজ়িটিভ রিপোর্ট আসছে।”
ফুসফুসরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজা ধর জানিয়েছেন, “আউটডোর ও ইনডোর উভয় ক্ষেত্রেই করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকটাই কম।”
উডল্যান্ডস হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান ডা. দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিড পজ়িটিভিটির হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে এখন ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।’’
সল্টলেকের টেকনো ইন্ডিয়া-ডামা হাসপাতাল ও আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতালেও একই ছবি। এক সপ্তাহে কোনও নতুন রোগী ভর্তি হননি। ফর্টিসে যেখানে ১২ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ জনে।
যদিও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে, মৃত্যুর ঘটনা এখনও একেবারে শূন্য নয়। বৃহস্পতিবার দিল্লি, কেরালা, পাঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্রে চার জন কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যেকেই ছিলেন বয়স্ক এবং একাধিক কোমর্বিডিটি আক্রান্ত।
তবে স্বস্তির খবর— গত দুই সপ্তাহে বাংলায় কোনও নতুন কোভিড মৃত্যুর খবর মেলেনি। বর্তমান চিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, কোভিড সংক্রমণ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের গতি কমলেও সতর্কতা এবং টিকাকরণের গুরুত্ব কমানো চলবে না। ব্যক্তিগত সুরক্ষা, হ্যান্ড হাইজিন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলা— এই তিনটি দিকেই এখনও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে যদি এই সংক্রমণ হ্রাসের ধারা বজায় থাকে, তবে আগামি মাসগুলিতে করোনা নিয়ে উদ্বেগ অনেকটাই কমবে বলেই মনে করছে চিকিৎসক মহল।