ওয়াকফ-জমিতে কুম্ভ মেলা! তরজায় পুরোহিত-মৌলানা

Kumbh Mela controversy: প্রয়াগরাজে আয়োজিত কুম্ভ মেলাকে কেন্দ্র করে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এইবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হলো ওয়াকফ জমি এবং কুম্ভ মেলার আয়োজক সংক্রান্ত একটি…

Uttar Pradesh Police Files Complaint After Women’s Bathing Images & Videos from Maha Kumbh Sold on Instagram and Telegram

short-samachar

Kumbh Mela controversy: প্রয়াগরাজে আয়োজিত কুম্ভ মেলাকে কেন্দ্র করে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এইবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হলো ওয়াকফ জমি এবং কুম্ভ মেলার আয়োজক সংক্রান্ত একটি দাবি। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মৌলানা শাহাবুদ্দিন রজভি বারেলভি মন্তব্য করেছেন যে, মহা কুম্ভ মেলা একটি ওয়াকফ জমিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তরজা, যা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা তৈরি করেছে।

   

প্রধান পুরোহিতের প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্কে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস। তিনি বলেন, “প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। ইসলাম ধর্মের সৃষ্টি হওয়ার অনেক আগেই কুম্ভ মেলার আয়োজন শুরু হয়েছিল। মৌলানা ইতিহাস জানেন না বলেই এমন ভিত্তিহীন মন্তব্য করছেন।”

আচার্য সত্যেন্দ্র দাস আরও বলেন, “কুম্ভ মেলা সম্পূর্ণরূপে সনাতন ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত একটি আয়োজন। এটি কোনওভাবেই ওয়াকফ জমিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। যারা এমন দাবি করছেন, তারা হয় অজ্ঞাত, নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।”

কুম্ভ মেলার ঐতিহাসিক পটভূমি
প্রয়াগরাজ, যা আগে এলাহাবাদ নামে পরিচিত ছিল, হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এখানে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মিলনস্থলে কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। এর ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। চতুর্দশ শতাব্দীতে কবি কালিদাসের লেখায় কুম্ভ মেলার উল্লেখ পাওয়া যায়। ইসলাম ধর্মের জন্ম হয় সপ্তম শতাব্দীতে, ফলে এ ধরনের দাবিকে ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বলে অভিহিত করেছেন বহু ঐতিহাসিক।

মৌলানার যুক্তি
অন্যদিকে, মৌলানা শাহাবুদ্দিন রজভি বারেলভি দাবি করেছেন যে কুম্ভ মেলা যে জমিতে অনুষ্ঠিত হয়, তা একসময় মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিল এবং সেই জমি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনস্থ। তিনি বলেন, “আমাদের ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী, এই জমি ওয়াকফ জমি হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এই জমিতে কুম্ভ মেলার আয়োজন করা ধর্মীয় এবং সামাজিকভাবে সমস্যার সৃষ্টি করছে।”

ধর্মীয় নেতাদের পাল্টা অভিযোগ
এই মন্তব্যের পরে হিন্দু ধর্মীয় নেতারা মৌলানার বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, “কুম্ভ মেলা একটি ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং এটি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জমি বা সম্পত্তির সঙ্গে যুক্ত নয়। এটি সনাতন ধর্মের ভক্তদের বিশ্বাসের বিষয়।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিতর্কটি শুধু ধর্মীয় মহলে সীমাবদ্ধ নয়, রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই বিষয়ে মন্তব্য করছেন। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বলেন, “কুম্ভ মেলা কোনও বিতর্কের বিষয় হতে পারে না। এটি ভারতের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক। মৌলানা এই ধরনের মন্তব্য করে অযথা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন।”

অন্যদিকে, বিরোধী দলের কিছু নেতা বলেন, “কোনও ধর্মীয় আয়োজন যেন অন্য ধর্মের মানুষকে আঘাত না করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বিতর্ক শুধু ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়ায় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রয়াগরাজের মতো ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানকে নিয়ে এমন বিবাদ মেলাকে কলুষিত করে।

ওয়াকফ জমিতে কুম্ভ মেলা নিয়ে এই বিতর্ক একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে: ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং সম্প্রদায়গত সম্পত্তির মধ্যে সীমারেখা কোথায়? উভয় সম্প্রদায়ের নেতাদের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐক্য অক্ষুণ্ণ থাকে।