বিজেপি শাসিত রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম

ভারতের গ্রামীণ এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি (Construction Workers Wages) নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। তথ্য অনুযায়ী,…

Construction Workers' Wages Lowest in BJP-Ruled States

ভারতের গ্রামীণ এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি (Construction Workers Wages) নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নির্মাণ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, ওড়িশা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে শ্রমিকদের আয় জাতীয় গড়ের (₹৪১৭.৩) নিচে রয়েছে।

বিজেপি শাসিত রাজ্যে নিম্নতম মজুরি
পরিসংখ্যান অনুসারে, মধ্যপ্রদেশে নির্মাণ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ₹২৯২.৪, যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিজেপি শাসিত গুজরাটে মজুরি ₹৩৪৪.৪, ওড়িশায় ₹৩৫৫.২, বিহারে ₹৩৬৫.৭ এবং উত্তরপ্রদেশে ₹৩৭৬.৬। এই রাজ্যগুলিতে নির্মাণ শ্রমিকরা প্রতিদিন গড়ে মাত্র ₹৩০০-₹৩৭০ আয় করেন, যা জীবিকা নির্বাহের জন্য অপ্রতুল। অন্যদিকে, বিজেপি শাসিত রাজ্য রাজস্থানে এই মজুরি ₹৪৩২.৭ টাকা। আর কংগ্রেস শাসিত কর্ণাটকে ₹৪৫৭.৬, যা কিছুটা ভালো হলেও জাতীয় গড়ের তুলনায় কম।

অন্য রাজ্যের তুলনায় বিশাল পার্থক্য
অন্যদিকে, কেরালা, তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কেরালায় দৈনিক মজুরি ₹৮৯৩.৬, যা মধ্যপ্রদেশের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। তামিলনাড়ুতে এটি ₹৫৩৯.৭, হিমাচল প্রদেশে ₹৫২৬.৯ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ₹৫২৪.৫। এসব রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকদের আয় অনেকটাই বেশি, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

বিজেপি শাসিত রাজ্যে মজুরি কম থাকার কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি কম থাকার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে—
১. শ্রম নীতির অভাব: বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির অধিকাংশে শ্রম আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই এবং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার দিকে খুব একটা নজর দেওয়া হয় না।
2. শিল্পায়নের অভাব: মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে পর্যাপ্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণ প্রকল্পের অভাব রয়েছে, যা শ্রমিকদের জন্য ভালো মজুরি নিশ্চিত করতে পারত।
৩. অসংগঠিত শ্রম বাজার: এসব রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকদের বেশিরভাগই অসংগঠিত শ্রম বাজারের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে তারা নিয়মিত কাজ পান না এবং ন্যূনতম মজুরির অধিকারও প্রায়শই লঙ্ঘিত হয়।
৪. কেন্দ্রের ভূমিকা: কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিও মজুরির হ্রাসের একটি কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির অধীনে শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি দেওয়া হচ্ছে না এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণও অনেক ক্ষেত্রে শিথিল রাখা হয়েছে।

শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই নিম্ন মজুরির প্রবণতা চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির শ্রমিকরা ব্যাপক আর্থিক সংকটে পড়তে পারেন। অনেক শ্রমিক ইতোমধ্যে উচ্চ মজুরির আশায় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে পাড়ি জমাচ্ছেন, যার ফলে স্থানীয় অর্থনীতির উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

Advertisements

এছাড়া, বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির হার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে এই কম মজুরি শ্রমিকদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করা, যাতে তারা ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারেন।

রিজার্ভ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম, যা তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। শ্রমিকদের সুরক্ষা ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারগুলির উচিত নীতিগত পরিবর্তন আনা এবং কেন্দ্রীয় সরকারেরও উচিত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নাহলে ভবিষ্যতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি আরও বেশি শ্রমিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।