বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল কংগ্রেসের জন্য যেমন কঠিন পরাজয় বয়ে এনেছে, তেমনই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের কার্যকারিতা নিয়েও। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচন-পূর্ব প্রচারে কংগ্রেস নেতৃত্ব “ভোট চুরি” ও বিশেষ বিন্যাস (SIR) নিয়ে যে অভিযোগের সুর তুলেছিল, শেষ পর্যন্ত তা ভোটারদের মধ্যে প্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই ইঙ্গিত মিলছে।
দীর্ঘ পথযাত্রা, সামান্য অর্জন
এই বছরের আগস্টে রাহুল গান্ধী সাসারাম থেকে পাটনা পর্যন্ত ‘ভোট অধিকার যাত্রা’ শুরু করেন। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এই যাত্রা পৌঁছেছিল ২৫টি জেলা এবং ১১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে। দলীয় কৌশলবিদদের প্রত্যাশা ছিল—এই যাত্রা ভোট-সংগ্রহে একটি নৈতিক বার্তা দেবে এবং ভূমিতলে কর্মীদের মধ্যেও নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
কিন্তু নির্বাচনী ফলের প্রবণতা বলছে, যাত্রাপথে থাকা কোনও বিধানসভা কেন্দ্রেই কংগ্রেস বিশেষ লাভ করতে পারেনি। ৬১টি আসনে লড়াই করেও দল মাত্র অতি ক্ষুদ্র সংখ্যক কেন্দ্রেই এগিয়ে, ফলে তাদের স্ট্রাইক রেট অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
NDA-র জোয়ারে হারাল কংগ্রেস–RJD জোট Congress Trailing In All Seats On Rahul Gandhi’s Yatra Route
অন্যদিকে বিজেপি এবং জেডিইউ—উভয়েই ১০১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে। লোজপা (রামবিলাস)–এর নেতৃত্বে চিরাগ পাসওয়ান, জিতনরাম মাঞ্জির দল ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার দলসহ NDA-র অন্যান্য সহযোগীরাও ভালো ফল করছে। ফলে মহাগঠবন্ধন কার্যত প্রতিযোগিতাতেই পিছিয়ে পড়েছে।
‘ভোট চুরি’ অভিযোগে সাড়া মেলেনি
কংগ্রেস এই যাত্রাকে SIR–এর মাধ্যমে ভোটার তালিকা সংশোধনে “প্রতারণা” ও “গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের” বিরুদ্ধে এক নৈতিক সংগ্রাম হিসেবে তুলে ধরেছিল। রাহুল গান্ধী একাধিক সভায় বলেছিলেন, “এক ব্যক্তি, এক ভোট—এটাই গণতন্ত্রের মূল সুর।”
তবে নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এবং সাধারণ ভোটাররাও নির্বাচনী প্রচারের শেষপর্বে এই ইস্যুকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি—এমনটাই স্পষ্ট হচ্ছে ফলাফলের বিশ্লেষণে।
কোথায় ব্যর্থ মহাগঠবন্ধন?
বিশ্লেষকদের মতে, মহাগঠবন্ধনের পরাজয়ের কারণ একাধিক—
ঐক্যের অভাব: কংগ্রেস তেজস্বী যাদবকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী মুখ ঘোষণা করতে দ্বিধা করেছিল।
সমন্বিত কৌশলের অভাব: প্রচারে জোটের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছয়নি সংগঠিতভাবে।
যাত্রার উত্তেজনা ধরে রাখা যায়নি: প্রথম দিকে মাঠপর্যায়ে উদ্দীপনা থাকলেও প্রচারের শেষ পর্বে সেই গতি বজায় থাকেনি।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার—কয়েকটি আসনে মিত্রদলের ‘ফ্রেন্ডলি ফাইট’ জোটের ক্ষতি ডেকে আনে।
গান্ধীর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন
গত কয়েক বছরে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার সাফল্য ও তেলেঙ্গানা নির্বাচনের জয়ের পর কংগ্রেসের বিশ্বাস ছিল,রাহুলের জনসংযোগ প্রচার এখনও সংগঠনকে শক্ত করতে সক্ষম। কিন্তু বিহারের গঙ্গা–কোশি–সোনের রাজনৈতিক বাস্তবতা সেই ধারণাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট—বহু প্রচার সত্ত্বেও ভোটারদের কাছে কংগ্রেসের বার্তা পৌঁছয়নি যথেষ্ট শক্তিতে; আর NDA–র সংগঠিত প্রচার ও প্রার্থী-ইকোসিস্টেম সেই শূন্যস্থান দখল করেছে কৌশলগতভাবে।


