‘দুর্ঘটনা ঠেকানো যায় না’ মন্তব্য ঘিরে কংগ্রেসের তোপ

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই ১৭১-এর ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জনের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যকে কংগ্রেস (congress) ‘অসংবেদনশীল’ বলে নিন্দা করেছে। কংগ্রেসের (congress) মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা শাহের “কেউ দুর্ঘটনা ঠেকাতে পারে না” মন্তব্যকে দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি (congress) বলেন, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে দায়িত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশিত, নয়তো ভাগ্যের উপর বক্তৃতা। খেরা এক্স-এ একটি পোস্টে লেখেন, “যখন একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং মানুষ প্রাণ হারায়, তখন একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে ন্যূনতম প্রত্যাশা হল দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতি, কাঁধ ঝাঁকানো এবং ভাগ্যের উপর বক্তৃতা নয়। ‘কেউ দুর্ঘটনা ঠেকাতে পারে না’ বলা দায়িত্ব এড়ানো। যদি কিছুই প্রতিরোধ করা যায় না, তাহলে মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনই বা কী?”

দুর্ঘটনার বিবরণ (congress)

১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, আমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে টেকঅফ করা এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ফ্লাইট এআই ১৭১ মাত্র পাঁচ মিনিট পর মেঘানিনগর এলাকায় বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়।

বিমানে ১২ জন ক্রু সদস্য-সহ মোট ২৪২ জন ছিলেন, যার মধ্যে ২৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি-ও মারা গেছেন। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি সিটবেল্ট খুলে বিমান থেকে বেরিয়ে আসি। চারপাশে শুধু মৃতদেহ ছিল। আমার বাঁ হাত আগুনে পুড়ে যায়।”

অমিত শাহের মন্তব্য ও কংগ্রেসের সমালোচনা

দুর্ঘটনার পর আমেদাবাদে (congress) উপস্থিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “দুর্ঘটনা কেউ ঠেকাতে পারে না। আমরা নিশ্চিত করব যে এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হবে এবং শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।” তবে তাঁর এই মন্তব্য কংগ্রেসের কাছে ‘অসংবেদনশীল’ বলে বিবেচিত হয়েছে।

পবন খেরা (congress) শাহের মন্তব্যের একটি সংক্ষিপ্ত ক্লিপ শেয়ার করে বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য শোকাহত পরিবারগুলির প্রতি অসম্মানজনক। একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সরকারের কাছ থেকে জনগণ দায়িত্বশীল জবাব এবং নিরাপত্তার আশ্বাস আশা করে, ভাগ্যের উপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানো নয়।” তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “যদি কিছুই প্রতিরোধ করা যায় না, তাহলে মন্ত্রণালয়ের অস্তিত্বের প্রয়োজন কী?”

কংগ্রেস (congress) নেতা জয়রাম রমেশও শাহের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “এই ধরনের ঘটনার পর সরকারের দায়িত্ব হল জনগণকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া এবং দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা। শাহের মন্তব্য দায়িত্বহীন এবং শোকাহত পরিবারগুলির প্রতি অসংবেদনশীল।” তিনি আরও বলেন, “বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে।”

উদ্ধার ও তদন্ত

দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার ব্রিগেড, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর দল উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমেদাবাদ পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক জানিয়েছেন, “অনেক মৃতদেহ পুড়ে অচেনা হয়ে গেছে।

ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ করা হবে।” কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নায়ডু কিনজারপু বলেন, “ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।” তিনি নিশ্চিত করেন যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি বিমানে ছিলেন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির মৃত্যু

৬৮ বছর বয়সী বিজয় রূপানি, যিনি ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে লন্ডনে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। রূপানির স্ত্রী অঞ্জলি রূপানি শুক্রবার আমেদাবাদে পৌঁছান, যেখানে গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংঘভি তাঁকে গ্রহণ করেন।

রূপানির প্রতিবেশী (congress) কিরণবেন বলেন, “এখনও মনে হয় তিনি আমাদের মাঝে আছেন। তাঁর স্মৃতি চিরকাল আমাদের সঙ্গে থাকবে।” তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক ডা. নয়ন শাহ বলেন, “৩৫ বছর ধরে আমরা প্রতিবেশী ছিলাম। এটা বিশ্বাস করা কঠিন।”

ক্ষতিপূরণ ও সমবেদনা

টাটা গ্রুপ ১ কোটি টাকা এবং এয়ার ইন্ডিয়া মন্ট্রিল কনভেনশন অনুযায়ী ১.৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং রূপানির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি এক্স-এ লেখেন, “বিজয়ভাইয়ের নম্রতা এবং কঠোর পরিশ্রম চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।” ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সহ বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।

মৃতদেহ শনাক্তে জোরালো পদক্ষেপ, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কংগ্রেসের দাবি

কংগ্রেস (congress) দাবি করেছে, এই দুর্ঘটনা ভারতের বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। পবন খেরা বলেন, “সরকারের উচিত জনগণকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া এবং দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা। শাহের মন্তব্য শোকাহত পরিবারগুলির প্রতি অসম্মানজনক।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে রোধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

আমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলির একটি। অমিত শাহের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক এই ঘটনার গুরুত্ব এবং সরকারি দায়বদ্ধতার প্রশ্নকে আরও জোরালো করেছে। কংগ্রেসের (congress) সমালোচনা এবং জনগণের প্রত্যাশা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা প্রার্থনা করি, নিহতদের আত্মা শান্তি লাভ করুক।