চীনের সঙ্গে সখ্যতা জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী বলে কটাক্ষ কংগ্রেসের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক চীন (Congress) সফর এবং তিয়ানজিনে শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর কংগ্রেস…

Congress

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক চীন (Congress) সফর এবং তিয়ানজিনে শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর কংগ্রেস পার্টি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেসের দাবি, মোদী সরকার চীনের প্রতি অত্যন্ত নরম মনোভাব প্রদর্শন করছে, যা ভারতের জাতীয় সুরক্ষা এবং স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর।

এই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা আগ্রাসনের ঘটনা, যেখানে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন।কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠককে ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করতে হবে।

   

সেই ঘটনায় আমাদের ২০ জন সাহসী জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু চীনা আগ্রাসনের কথা স্বীকার না করে, ১৯ জুন, ২০২০-এ প্রধানমন্ত্রী মোদী চীনকে একটি ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছিলেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান লাদাখে চীনের সঙ্গে সীমান্তে পূর্ণাঙ্গ স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু মোদী সরকার তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিবর্তে, তারা চীনের সঙ্গে পুনর্মিলনের দিকে এগিয়ে গেছে, যা কার্যত চীনের আঞ্চলিক আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার সমতুল্য।

তিয়ানজিনে মোদী-শি বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার মধ্যে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করা এবং কৈলাস মানসরোবর যাত্রার মতো সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মোদী বলেছেন, “গত বছর কাজানে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল, যা আমাদের সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

সীমান্তে বিচ্ছিন্নকরণের পর শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে ভারত-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে।কিন্তু কংগ্রেস এই পদক্ষেপকে “মেরুদণ্ডহীন” বলে সমালোচনা করেছে। জয়রাম রমেশ আরও বলেছেন, “চীন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ‘অপবিত্র জোট’ গড়ে তুলেছে, বিশেষ করে অপারেশন সিন্ধুর সময়।

এরপরও মোদী সরকার চীনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফরের মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে চীনের ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোষণা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু মোদী সরকার এই বিষয়ে কোনও কথা বলেনি।

কংগ্রেস আরও অভিযোগ করেছে যে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের “অনিয়ন্ত্রিত ডাম্পিং” ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিকে (এমএসএমই) ধ্বংস করছে।

Advertisements

তারা দাবি করেছে যে অন্যান্য দেশ চীনা আমদানির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলেও, ভারত সরকার এই বিষয়ে নীরব রয়েছে। একটি হিন্দি পোস্টে কংগ্রেস লিখেছে, “চীন আমাদের ২০ জন জওয়ানকে হত্যা করেছে, অপারেশন সিন্ধুর সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে এবং তাদের লাইভ আপডেট দিয়েছে।

এই নোংরা কাজের জবাবে নরেন্দ্র মোদী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন—তিনি হাসিমুখে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।”এই সমালোচনার পাশাপাশি, কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে যে মোদী সরকারের এই “নতুন স্বাভাবিক” কি চীনা আগ্রাসন এবং বুলিংকে মেনে নেওয়ার নীতি? তারা দাবি করেছে যে সরকারের এই পদক্ষেপ ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় গর্বের প্রতি আঘাত।

তিয়ানজিনে মোদী-শি বৈঠকের সময় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শি জিনপিং বলেছেন, ভারত ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বই “সঠিক পছন্দ” এবং দুই দেশের “ড্রাগন ও হাতি” একসঙ্গে কাজ করলে পারস্পরিক সাফল্য অর্জন সম্ভব।

সঞ্জু স্যামসনের ৪১ বলে ৮৩, গম্ভীরকে এশিয়া কাপের বার্তা

তবে, কংগ্রেসের দাবি, এই বৈঠকের মাধ্যমে মোদী সরকার চীনের আগ্রাসী নীতির সামনে নতি স্বীকার করছে। তারা বলছে, যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করছে, তখন সরকারের এই “নরম” পদক্ষেপ দেশের সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই বিতর্কের মধ্যে, তিয়ানজিন শীর্ষ সম্মেলন ভারত-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।