পাটনা, ৬ সেপ্টেম্বর: আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলির মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা তীব্র গতিতে এগোচ্ছে (Congress Seat)। সূত্রের খবর, কংগ্রেস বিহারের ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এই বিষয়ে ইন্ডিয়া জোটের সাম্প্রতিক বৈঠকে একটি প্রাথমিক ঐকমত্য গড়ে উঠেছে।
এই সিদ্ধান্ত বিহারের মহাগাঠবন্ধন জোটের প্রধান শরিক রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলির মধ্যে সমন্বয়ের ফলাফল। এই নির্বাচনে মহাগাঠবন্ধনের লক্ষ্য হলো শাসক জনতা দল (ইউনাইটেড) জেডি(ইউ) এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-কে পরাজিত করা।
ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনায় কংগ্রেসের বিহার ইউনিটের নেতারা জোর দিয়েছেন যে, দলকে ‘সম্মানজনক এবং জয়যোগ্য’ আসন দেওয়া হোক। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, কিন্তু মাত্র ১৯টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
এই ফলাফলের জন্য দলের নেতারা আরজেডি-র উপর দায় চাপিয়েছিলেন, অভিযোগ করে বলেছিলেন যে তাদের কঠিন আসন দেওয়া হয়েছিল এবং ঘাসফুল স্তরে সমর্থনের অভাব ছিল।
এবার কংগ্রেস তাদের আসন সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে ৬৬টি করলেও জয়ের সম্ভাবনা বেশি এমন আসন দাবি করছে।বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, এই আসন ভাগাভাগি মহাগাঠবন্ধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা জোটের প্রচারে গতি এনেছে।
তবে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বিহারে দলের প্রভাব বাড়ানোর জন্য সক্রিয়ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। রাহুল গান্ধী গত ছয় মাসে বিহারে একাধিকবার সফর করেছেন, বিশেষ করে দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি এবং সংখ্যালঘুদের মধ্যে সমর্থন বাড়ানোর জন্য।
তিনি বেকারত্ব, শিক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়ের মতো বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন, যা আরজেডি-র জাত-ভিত্তিক প্রচারের থেকে আলাদা।ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে আরজেডি-র নেতৃত্বে মহাগাঠবন্ধনের অন্যান্য শরিকদের মধ্যে বামপন্থী দলগুলি (সিপিআই, সিপিএম, এবং সিপিআই-এমএল) এবং বিভিন্ন ছোট দলের জন্যও আসন বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্রের খবর, আরজেডি প্রায় ১৪০-১৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, যেখানে বামপন্থী দলগুলি ২৫-৩০টি আসন পেতে পারে। বাকি আসনগুলি কংগ্রেস এবং অন্যান্য ছোট শরিকদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। এই ঐকমত্য জোটের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতীতে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতভেদ জোটের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলেছিল।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিহারে মহাগাঠবন্ধন মাত্র ৯টি আসন জিতেছিল, যেখানে আরজেডি ৪টি এবং কংগ্রেস ৩টি আসন পেয়েছিল। এই ফলাফল জোটের জন্য হতাশাজনক ছিল, কারণ এনডিএ ৩০টি আসন জিতেছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস এবার বিহারে আরও শক্তিশালী প্রচারের পরিকল্পনা করছে।
দলের নেতারা বিশ্বাস করেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে চলা ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ এবং কংগ্রেসের সামাজিক ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি শহুরে এবং গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে সমর্থন বাড়াবে।তবে, জোটের মধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পূর্ণিয়ার মতো কিছু আসনে কংগ্রেস নেতা পাপ্পু যাদবের প্রার্থিতা নিয়ে আরজেডি-র সঙ্গে মতভেদ দেখা দিয়েছে।
পাপ্পু যাদব, যিনি সম্প্রতি তাঁর জন অধিকার পার্টি (জেএপি) কংগ্রেসে একীভূত করেছেন, পূর্ণিয়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জোর দিচ্ছেন, কিন্তু আরজেডি ইতিমধ্যে সেখানে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এই ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব জোটের ঐক্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।কংগ্রেস নেতা তরিক আনোয়ার বলেছেন, “বিহারে আমাদের জোট ২৫-৩০ বছরের পুরনো।
আমাদের লক্ষ্য এনডিএ-কে পরাজিত করা। আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সবকিছু ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধান হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগামী মার্চে বিহারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করবে।বিহারের নির্বাচনী প্রচারে বেকারত্ব, যুবকদের অভিবাসন এবং সামাজিক ন্যায়ের মতো বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কংগ্রেস এবং আরজেডি উভয়ই এই বিষয়গুলিকে তাদের প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু করেছে। তবে, জন সুরাজ পার্টির মতো নতুন দল এবং এনডিএ-র শক্তিশালী প্রচারের মুখে মহাগাঠবন্ধনের জন্য এই নির্বাচন একটি কঠিন লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলার বাইরে বাঙালি পরিচালিত পুরসভায় ১৬.৩৮ কোটি চুরি
ইন্ডিয়া জোটের এই ঐকমত্য বিহারে কংগ্রেসের অবস্থানকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী দিনে আসন ভাগাভাগির চূড়ান্ত ঘোষণা এবং প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জোটের প্রচার আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।