মহিলাদের মদ্যপান নিয়ে কংগ্রেস নেতার মন্তব্যে বিতর্ক

মধ্যপ্রদেশে মহিলাদের মদ্যপানের প্রবণতা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে। কংগ্রেসের মধ্যপ্রদেশ প্রদেশ সভাপতি জিতু পাটোয়ারির ( Congress Leader Jitu Patwari) মন্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে…

মধ্যপ্রদেশে মহিলাদের মদ্যপানের প্রবণতা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে। কংগ্রেসের মধ্যপ্রদেশ প্রদেশ সভাপতি জিতু পাটোয়ারির ( Congress Leader Jitu Patwari) মন্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। জিতু পাটোয়ারি দাবি করেছেন, দেশের অন্য যেকোনও রাজ্যের তুলনায় মধ্যপ্রদেশে মহিলাদের মধ্যে মদ্যপান এবং মাদকাসক্তির প্রবণতা সর্বাধিক। এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। তবে কংগ্রেস নেতা তাঁর বক্তব্যে অনড়, এবং জানিয়েছেন তিনি মোদী সরকারের প্রকাশিত জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ (NFHS-5)-এর রিপোর্টের তথ্যের ভিত্তিতেই মন্তব্য করেছেন।

মঙ্গলবার ভোপালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জিতু পাটোয়ারি বলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ একসময় সমৃদ্ধির জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার রাজ্যটিকে মাদক এবং নেশাগ্রস্ত রাজ্যে পরিণত করেছে। আপনারা যদি দেখেন, এখনকার যুব সমাজ বেকারত্বের পাশাপাশি মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে, তার জন্য বিজেপি সরকারই দায়ী।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের বোনেরা, মেয়েরা আজ মাদক গ্রহণ করছে। বিজেপি ‘লাডলি বেহনা’ প্রকল্প চালু করেছে, কিন্তু বাস্তবে মহিলাদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রদেশেই।’’

   

বিজেপি নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেস কখনও মহিলাদের জন্য কোনও কার্যকর প্রকল্প চালায়নি। আমরা ‘লাডলি লক্ষ্মী’ এবং ‘লাডলি বেহনা’র মতো প্রকল্প চালু করেছি। অথচ কংগ্রেস নেতা রাজ্যের মহিলাদের অপমান করছেন। এটি রাজ্যের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ মহিলাদের অসম্মান। জিতু পাটোয়ারিকে ক্ষমা চাইতে হবে।’’

যদিও ক্ষমা চাইতে নারাজ জিতু পাটোয়ারি। তিনি দাবি করেছেন, NFHS-5 রিপোর্টেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে মধ্যপ্রদেশে মহিলাদের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শতাংশের বিচারে মধ্যপ্রদেশ শীর্ষে নয়।

Advertisements

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ (২০১৯-২১) অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে মাত্র ১.৬ শতাংশ মদ্যপান করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২৯.৬ শতাংশ। বিপরীতে, অরুণাচল প্রদেশে মহিলাদের মধ্যে মদ্যপানের হার সর্বাধিক—২৪.২ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে সিকিম (১৬.২ শতাংশ), অসম (৭.৩ শতাংশ), তেলঙ্গানা (৬.৭ শতাংশ), ঝাড়খণ্ড (৬.১ শতাংশ) এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (৫ শতাংশ)।

তাহলে জিতু পাটোয়ারির যুক্তি কী? তিনি জানান, ‘‘NFHS-5 রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় মধ্যপ্রদেশের গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় এলাকাতেই মহিলাদের মধ্যে মদ্যপান এবং মাদকাসক্তির হার বেড়েছে।’’ তিনি রাজ্যের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘মাদক মাফিয়াদের সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রীদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিজেপি নেতারা মাদক মাফিয়াদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, অথচ এই সমস্যার সমাধান করতে সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’’

এই মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপি যেখানে কংগ্রেস নেতাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলছে, কংগ্রেস নেতা সেখানে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নিজের বক্তব্যে অটল। মদ্যপান ও মাদক সমস্যা নিয়ে এই রাজনৈতিক সংঘাত আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।