ছত্তরপুরের (Chhattarpur) একটি ফার্মহাউসে ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে তার সহকর্মী ১০,০০০ টাকা ধার দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত চন্দ্র প্রকাশ (৪৭), যিনি ওই ফার্মহাউসেরই ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তাকে রবিবার দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির পালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২৬ জুলাই, যখন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সীতা রামের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ মেহরাউলি থানায় জমা পড়ে। তিনি গত ১০ বছর ধরে ওই বেসরকারি ফার্মহাউসে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় ফার্মহাউসের মালিক শহরের বাইরে ছিলেন এবং সীতা রাম একাই সেখানে অবস্থান করছিলেন।
প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গিয়েছে, অন্যান্য কর্মীরা ফার্মহাউসের মূল দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান। এরপর পুলিশ একটি অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে এবং খামারবাড়ির ভিতরে একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে সীতা রামের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এরপরেই মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য ফরেনসিক দলকে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ডাকা হয় এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, রবিবার মেহরাউলিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) এর ধারা ১০৩(১) (হত্যা) এবং ২৩৮(ক) (প্রমাণ অদৃশ্য করার কারণ) এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।”
তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ডেটা ও অন্যান্য কর্মীদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন যে অভিযুক্ত চন্দ্র প্রকাশ ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন।
জানা গিয়েছে, কারিগরি নজরদারি এবং স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে পুলিশ দিল্লির পালামে চন্দ্র প্রকাশের অবস্থান ট্র্যাক করে এবং সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে চন্দ্র প্রকাশ স্বীকার করে যে, সে সীতা রামের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল। কিন্তু সীতা রাম টাকা দিতে অস্বীকার করলে উভয়ের মধ্যে বচসা শুরু হয়। উত্তেজনার বশে সে একটি হাতুড়ি নিয়ে সীতা রামের মাথায় আঘাত করে, যার ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে চন্দ্র প্রকাশ মৃতদেহটি সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, চন্দ্র প্রকাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়িটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত চলছে, এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিল কি না।
উল্লেখ্য, চন্দ্র প্রকাশের বাড়ি উত্তরাখণ্ডের আলমোড়া জেলার পান্তগাঁও গ্রামে। বর্তমানে সে ছত্তরপুরে বসবাস করত এবং দীর্ঘ সাত বছর ধরে ওই ফার্মহাউসে চালক হিসেবে কাজ করছিল।
স্থানীয় কর্মীরা সীতা রামকে একজন সৎ ও সাহায্যকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। স্থানীয় অনেকেই তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
এক সহকর্মী জানান, হত্যার পর চন্দ্র প্রকাশ নিজেই মালিককে সীতা রামের নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন, যাতে সন্দেহ এড়ানো যায়। পরে মালিকই পুলিশকে বিষয়টি জানান।
ঘটনার পর ফার্মহাউস এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলমান এবং অন্য কেউ জড়িত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


