তামিলনাড়ুর কোয়াম্বাটুরে কলেজছাত্রী ধর্ষণকাণ্ডে রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় জড়িত তিন অভিযুক্তকে সোমবার ভোরে গুলি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন অভিযুক্ত থাভাসি, করুপ্পাসামি ও কালীস্বরণকে বিমানবন্দরের কাছাকাছি এক মন্দিরের আশেপাশে ঘিরে ফেলে বিশেষ পুলিশ দল।
পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি
পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে তিনজনই ধারালো অস্ত্র নিয়ে পাল্টা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এতে হেড কনস্টেবল চন্দ্রশেখর গুরুতর জখম হন। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়, তাতে তিন অভিযুক্তেরই পায়ে গুলি লাগে। পরে তাদের আটক করে কোয়াম্বাটুর জেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত পুলিশকর্মীকেও চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, তিনজনই শিবগঙ্গাই জেলার বাসিন্দা এবং কোয়াম্বাটুরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। করুপ্পাসামি ও কালীস্বরণ আত্মীয়। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই পূর্বে একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে।
সূত্রের খবর, রবিবার রাতে এক কলেজছাত্রী ও তাঁর বন্ধু গাড়ি নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় অভিযুক্তরা তাদের পথ আটকে প্রথমে ছাত্রীর বন্ধুকে আক্রমণ করে এবং তারপর তরুণীকে গাড়ি থেকে টেনে বের করে নিয়ে যায়। পরে বিমানবন্দরের সংলগ্ন নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে অভিযুক্তরা।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের ঝড় Coimbatore student gang rape
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্যজুড়ে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এআইএডিএমকে সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাডি কে. পলানিস্বামী রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “আমাদের আমলে তামিলনাড়ু ছিল দেশের অন্যতম নিরাপদ রাজ্য, যেখানে মহিলারা নিশ্চিন্তে বসবাস করতেন। কিন্তু ডিএমকে সরকারের শাসনে সেই নিরাপত্তা আজ ভেঙে পড়েছে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এল. মুরুগান বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রমাণ করে যে, তামিলনাড়ুতে মহিলাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধের হার কোনোভাবেই কমছে না।”
রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক
বিজেপি রাজ্য সভাপতি নৈনার নাগেন্দ্রন রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। কোয়াম্বাটুর দক্ষিণের বিধায়ক ও বিজেপি মহিলা মোর্চা সভানেত্রী বাণাথি শ্রীনিবাসন বলেন, “ডিএমকে সরকারের আমলে মহিলাদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এটি শাসকের মুখে এক গভীর কালিমা।”
বিজেপি নেতা কে. অন্নামলাই আরও তীব্র ভাষায় বলেন, “ডিএমকে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অপরাধীরা আইনের ভয় হারিয়েছে। প্রশাসনিক শৃঙ্খলা আজ একেবারেই নেই। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।”
এদিকে কোয়াম্বাটুর পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত দ্রুতগতিতে চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ, সবত্রই এখন একটাই প্রশ্ন, তামিলনাড়ুতে নারী নিরাপত্তার এই ভয়াবহ অবক্ষয় কোথায় গিয়ে থামবে?


