বিমানের ককপিটে ক্যামেরা নেই কেন? এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পরই উঠল প্রশ্ন

নয়াদিল্লি: আহমেদাবাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ভয়াবহ দুর্ঘটনার একমাস পর Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB)-এর অন্তর্বর্তী রিপোর্ট ঘিরে ফের বিতর্ক। ওই রিপোর্টেই প্রকাশ…

Cockpit Video Recorder Debate

নয়াদিল্লি: আহমেদাবাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ভয়াবহ দুর্ঘটনার একমাস পর Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB)-এর অন্তর্বর্তী রিপোর্ট ঘিরে ফের বিতর্ক। ওই রিপোর্টেই প্রকাশ পায়, ভেঙে পড়ার ঠিক আগে দুই পাইলটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক সংলাপ “Why did you cut off the fuel?” – “I did not do so.” যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘তুমি ফুয়েল বন্ধ করলে কেন? – আমি কিছু করিনি৷’’

এই সংলাপ পাওয়া গিয়েছে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (Cockpit Voice Recorder) থেকে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই মুহূর্তে যদি বিমানে ককপিট ভিডিও রেকর্ডার থাকত, তাহলে হয়তো জানা যেত সঠিকভাবে কী ঘটেছিল (Cockpit Video Recorder Debate)। শুধুই অডিও নয়, ভিডিও থাকলে হয়তো সন্দেহ বা জল্পনার অবকাশ থাকত না, এই দাবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র।

   

বিমান দুর্ঘটনায় কেন দরকার ককপিট ভিডিও রেকর্ডার?

  • বর্তমানে বিমানগুলির ব্ল্যাক বক্সে দুটি রেকর্ডার থাকে—
  • ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (FDR): বিমানের সমস্ত প্রযুক্তিগত পরিমাপ রেকর্ড করে।
  • ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR): পাইলটদের কথোপকথন ও অন্যান্য শব্দ রেকর্ড করে।

কিন্তু ভিডিও? তা এখনও নেই। অথচ বাস, ট্রাক, এমনকি স্কুলবাসেও এখন ক্যামেরা থাকে। তাহলে বিমানের মতো উচ্চ প্রযুক্তির যানে কেন ককপিটে ক্যামেরা নেই?

পাইলটদের আপত্তি: নিরাপত্তা না গোপনীয়তা?

ককপিটে ভিডিও রেকর্ডার বসানোর প্রধান বাধা পাইলটদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, ভিডিও রেকর্ডিং পাইলটদের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করবে। কঠিন মুহূর্তে ভিডিও থাকার চাপ তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু পরিস্থিতিতে পাইলটরা নিয়ম ভেঙে সিদ্ধান্ত নেন-ভিডিও থাকলে তা ভুলভাবে ব্যাখ্যা হতে পারে। এছাড়াও ভিডিও ফাঁস হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দুর্ঘটনায় মৃত যাত্রীদের পরিবার।

পাইলটদের সংগঠন ALPA (Air Line Pilots Association) দীর্ঘদিন ধরেই এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে লবিং চালিয়ে আসছে, বিশেষ করে আমেরিকায়।

ককপিট ভিডিও থাকলে স্পষ্ট হতো সত্য!

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ককপিট ভিডিও থাকলে তদন্ত ত্বরান্বিত হয়। অনিশ্চয়তা দূর হয় এবং পাইলটদের ভুলভাবে দোষারোপ করার সুযোগ কমে। এছাড়াও জল্পনা বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানোর সুযোগ কমে।বোঝা যায়-ঘটনার জন্য দায়ী মানুষ, যন্ত্র, নাকি সফটওয়্যারের ত্রুটি।

Advertisements

বিষয়টি নতুন নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের NTSB (National Transportation Safety Board) ১৯৮৯ সালেই ককপিট ভিডিও রেকর্ডার চালুর পরামর্শ দিয়েছিল। ২০০৩ সাল থেকে তাদের ‘Most Wanted’ তালিকায় এই বিষয়টি রয়েছে।

চিন এগোচ্ছে, ভারত কী করবে?

চিন ইতিমধ্যেই দেশীয় তৈরি বিমান COMAC C919-এ ককপিটে ভিডিও নজরদারি চালু করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। ইউরোপেও আইনগত বাধা নেই। অথচ মার্কিন FAA এখনো বাধা দিচ্ছে।

এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পরে ভারতে পাইলটদের আচরণ, সিস্টেমের ত্রুটি, এবং জল্পনার মুখে পড়তে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। এই প্রেক্ষিতেই অনেকেই বলছেন-এটা ভিডিও রেকর্ডার চালুর উপযুক্ত সময়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিন না একদিন ককপিট ভিডিও রেকর্ডার আসবেই। আজ পাইলটরা যেভাবে CVR-এর (ভয়েস রেকর্ডার) বিরুদ্ধে ছিলেন, সেভাবেই হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও রেকর্ডারও গ্রহণযোগ্য হবে।