দিল্লির কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি সরকারকে নোটিস জারি করা হল। এছাড়াও জবাব তলব করা হয়েছে দিল্লি পুরসভার কাছে। দিল্লির ঘটনা মর্মান্তিক ওই ঘটনাকে, ‘চোখ খুলে দেওয়া’ বলে মনে করছে দেশের শীর্ষ আদালত। তীব্র ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘কোচিং সেন্টারগুলে ডেথ চেম্বারে পরিণত হয়েছে’।
আইএএস পরীক্ষার জন্য পড়ুয়াদের ট্রেনিং দেওয়া হয় রাজধানীর একাধিক কোচিং সেন্টারে। গত মাসে দিল্লির বেসমেন্টে থাকা কোচিং সেন্টারের জলে ডুবে তিন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার বিভৎসতা বিচার করে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার সকালে সেই মামলার শুনানি হয়। শুনানির সময়, সুপ্রিম কোর্ট কোচিং সেন্টার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য কর্তৃপক্ষকে তিরস্কার করে, সঙ্গে বিচারপতিদের অভিযোগ, ‘পড়ুয়াদের জীবন নিয়ে খেলা চলছে’।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘কোচিং সেন্টারগুলো ডেথ চেম্বারে পরিণত হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা এবং সেন্টার চালানোর জন্য মৌলিক নিয়মগুলির সম্মতি না থাকলে কোচিং ইনস্টিটিউটগুলি অনলাইনে কাজ করতে পারে। কোচিং সেন্টারগুলি প্রার্থীদের জীবন নিয়ে খেলা করছে।’
অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, ভারতীয়দের ওদেশে যেতে সতর্কতা জারি বিদেশমন্ত্রকের
এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট ওই ঘটনার জন্য পুলিশ এবং পুরসভার বেশ কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে দুষেছিলেন। তারপরই দিল্লির ওল্ড রাজেন্দ্ররনগর এলাকায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন শিশুর মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআই’কে করার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। দিল্লি হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহন এবং বিচারপতি তুষার রাও গেদেলার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ঘটনার প্রকৃতি বিবেচনা করতে এবং তদন্ত নিয়ে যাতে সাধারণ মানুষের মনে কোনও সন্দেহ না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই তদন্তভার সিবিআই-কে হস্তান্তরিত করা হল। এছাড়া হাইকোর্ট, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে সিবিআই তদন্ত পর্যবেক্ষণের জন্য একজন আধিকারিককে মনোনীত করার নির্দেশ দেয়।
ওই দিনের শুনানিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দিল্লি পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকার নিন্দা করেছে উচ্চ আদালত। কেন ওই এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক ছিল না, কী ভাবে এত জল জমল, কেনই বা প্রশাসনের চোখের সামনে অনুমতি ছাড়া বেআইনি ভাবে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরি চালানো হচ্ছিল, সে সব প্রশ্ন করেন বিচারপতি। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, রাস্তায় জল জমে থাকা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যাকে গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না পুরসভার তরফে। সেই গাফিলতিরই ফল রাজেন্দ্রনগরের ঘটনা।
গত ২৭ জুলাই রাজেন্দ্রনগরের একটি কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে আচমকা বৃষ্টির জল ঢুকে যায়। বেসমেন্টের লাইব্রেরিতে পড়ুয়ারা ছিলেন। জল ঢুকতে দেখে অনেকেই দ্রুত উপরে উঠে আসেন। কিন্তু তিন পড়ুয়া বেরিয়ে আসার সময় পাননি। জলে ডুবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তিন জনেই আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অভিযোগ, বেআইনি ভাবে বেসমেন্টে লাইব্রেরি চালানো হচ্ছিল। ওই বেসমেন্ট কেবল গাড়ি পার্কিং এবং গুদামঘর হিসাবে ব্যবহারের ছাড়পত্র ছিল। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোচিং সেন্টারের মালিক সহ ছ’জন ধৃত।