দিল্লির দূষণ রোধে বড় পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার, নভেম্বরে আসছে কঠোর নিয়ম

দিল্লির (Delhi) হৃদয়ে জমে থাকা বিষ—দূষণ। প্রতিবছর শীতের শুরুতেই রাজধানী শহর পরিণত হয় এক বিষাক্ত গ্যাসচেম্বারে। চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও…

CM Rekha Gupta Bans Old Diesel Vehicles

দিল্লির (Delhi) হৃদয়ে জমে থাকা বিষ—দূষণ। প্রতিবছর শীতের শুরুতেই রাজধানী শহর পরিণত হয় এক বিষাক্ত গ্যাসচেম্বারে। চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও দেখা দেয় বহু মানুষের। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকট মোকাবিলায় এবার এক বড় পদক্ষেপ নিলেন দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী রেখা গুপ্তা।

নতুন সিদ্ধান্ত
মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা ঘোষণা করেছেন, ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে দিল্লিতে কেবলমাত্র BS6 মানের, CNG চালিত কিংবা ইলেকট্রিক (EV) বাণিজ্যিক গাড়িগুলোকেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। পুরনো ডিজেল-চালিত, পরিবেশ দূষণকারী গাড়িগুলিকে রাস্তায় দেখা যাবে না বললেই চলে।

   

এই নিয়ম কার্যকর করতে দিল্লির প্রতিটি প্রবেশপথ ও পেট্রোল পাম্পে ANPR (Automatic Number Plate Recognition) ক্যামেরা বসানো হবে। এই আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সহজেই শনাক্ত করা যাবে এমন সব গাড়ি যাদের লাইফ টাইম বা নির্ধারিত পরিবেশগত মান উত্তীর্ণ নয়। সেই গাড়িগুলিকে ঢুকতেই দেওয়া হবে না, এমনকি দিল্লির ভেতরে পেট্রোলও দেওয়া হবে না।

পুরনো বনাম নতুন উদ্যোগ
এর আগে আম আদমি পার্টি পরিচালিত সরকার, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে, জোড়-বিজোড় গাড়ি চলাচলের নিয়ম চালু করেছিল। জোড় সংখ্যার নম্বরের গাড়ি একদিন, বিজোড় সংখ্যার গাড়ি অন্যদিন চলতে পারত। সেই নীতিতে ছাড় ছিল মহিলা চালক, জরুরি পরিষেবার গাড়ি ও সরকারি কর্মীদের জন্য। কিন্তু বাস্তবে সেই উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। রাজধানীর দূষণস্তর তখনও অস্বাভাবিক রয়ে গিয়েছিল।

রেখা গুপ্তা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “দূষণের বিরুদ্ধে আপস নয়। মানুষের জীবন, শিশুদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে হলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।” এই ঘোষণা শুধু দিল্লিবাসীর জন্য নয়, দেশের অন্যান্য শহরের কাছেও এক বার্তা।

প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
পরিবেশবিদরা রেখা গুপ্তার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বাণিজ্যিক যানবাহনের দূষণে বড় অংশে দায়ী পুরনো ডিজেলচালিত গাড়ি। এদের রাস্তা থেকে সরানো গেলে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কমবে। বিশেষত হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের দিক থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক ও বাণিজ্যিক গাড়ি দিল্লিতে ঢোকে, যাদের মধ্যে বহু গাড়িই ১৫ বছরের পুরনো। এইসব গাড়ি বাতিল করে দিলে পরিবেশ অনেকটাই স্বস্তি পাবে।

Advertisements

তবে, পরিবহণ ব্যবসায়ীদের একাংশ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এত অল্প সময়ে সকল গাড়িকে BS6 বা CNG/EV মডেলে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। সরকারের উচিত হবে একটি ট্রানজিশন প্ল্যান দেওয়া, যেখানে সাবসিডি, ঋণসুবিধা বা পুরনো গাড়ি বদলে নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সহায়তা থাকবে।

আগামীর বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা জানিয়েছেন, আগামী ছ’মাসের মধ্যেই একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী গাড়ি মালিকরা কীভাবে তাঁদের যানবাহন পরিবেশবান্ধব মডেলে রূপান্তর করবেন, তার দিকনির্দেশ থাকবে।

এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজধানীতে যেমন শুরু হয়েছে আলোচনা, তেমনই আশার আলো দেখছেন বহু নাগরিক। তারা মনে করছেন, দিল্লি শহরকে দূষণমুক্ত করতে অবশেষে কেউ কঠিন অথচ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে, দিল্লির বুকে নির্মল বাতাস ফেরানোর লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার এই সিদ্ধান্ত এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এখন দেখার, আগামী দিনে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হয় এবং তা অন্য রাজ্যগুলিতে আদৌ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে কি না।