তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ. রেবন্ত রেড্ডি সম্প্রতি (Sonia)কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর একটি প্রশংসাপত্রকে তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে বর্ণনা করেছেন । তিনি এই প্রশংসাপত্রকে অস্কার পুরস্কার, নোবেল পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারের সমতুল্য বলে উল্লেখ করেছেন। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতরে তেলেঙ্গানার জাতি-ভিত্তিক জনগণনার (কাস্ট সেন্সাস) ফলাফল উপস্থাপনের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
সোনিয়া গান্ধী তাঁকে একটি হস্তলিখিত চিঠিতে তেলেঙ্গানার এই ঐতিহাসিক জনগণনার জন্য প্রশংসা করেছেন, যা রেড্ডি তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্বীকৃতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যেখানে বিরোধীরা এটিকে কংগ্রেসের মধ্যে চাটুকারিতার উদাহরণ হিসেবে সমালোচনা করেছে।
প্রশংসাপত্রের পটভূমি
নয়াদিল্লির কংগ্রেস সদর দফতরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে রেবন্ত রেড্ডি তেলেঙ্গানার সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক এবং জাত-ভিত্তিক জনগণনা (SEEEPC) সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন। এই সমীক্ষা, যা ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হয়, ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এত বিস্তৃতভাবে জাতি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে।
সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, তেলেঙ্গানার জনসংখ্যার ৫৬.৩৬% পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (BC), ১৭.৪% তফসিলি জাতি (SC), ১০.৯% তফসিলি উপজাতি (ST) এবং ৩.৯% জনগোষ্ঠী জাতবিহীন। এই সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে তেলেঙ্গানা সরকার স্থানীয় সংস্থা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে BC-দের জন্য ৪২% সংরক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেছে।
সোনিয়া গান্ধী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, “এই তাৎপর্যপূর্ণ এবং শুভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত হতাম, কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত প্রতিশ্রুতির কারণে আমি উপস্থিত থাকতে পারছি না। তবে, আমি আপনাকে এবং সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের একটি সফল ও স্মরণীয় অনুষ্ঠানের জন্য আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
রেড্ডি এই চিঠিকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের “সর্বোচ্চ সাফল্য” এবং “সন্তুষ্টির শীর্ষ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “সোনিয়া গান্ধী আমাদের নেত্রী, ত্যাগের প্রতীক, এবং তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া দেবতুল্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর এই প্রশংসাপত্র আমার জন্য অস্কার, নোবেল এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারের সমান।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রেড্ডির এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এটিকে কংগ্রেসের মধ্যে “চাটুকারিতার” উদাহরণ হিসেবে সমালোচনা করেছে। বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, “রেবন্ত রেড্ডি সোনিয়া গান্ধীকে দেবতুল্য বলে এবং তাঁর প্রশংসাপত্রকে অস্কার ও নোবেলের সমতুল্য বলে উল্লেখ করেছেন। এটি কংগ্রেসে চাটুকারিতার সীমাহীন প্রকাশ।
যদি তেলেঙ্গানার জনগণনা এতই ভালো, তবে কেন তারা তেলেঙ্গানা বা কর্নাটকে একজন OBC মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করছে না?” সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, অনেকে রেড্ডির এই মন্তব্যকে “চরম চাটুকারিতা” হিসেবে উপহাস করেছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “রেড্ডি কি মুখ্যমন্ত্রী, নাকি চাটুকার? কংগ্রেস রাজ্য শাসন করে না, তারা একটি পরিবারের পূজা করে।”
তেলেঙ্গানা জনগণনা এবং রেড্ডির ভূমিকা
রেড্ডি তেলেঙ্গানার জনগণনাকে “রেয়ার মডেল” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে দেশের জন্য একটি আদর্শ মডেল বলে দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই সমীক্ষার পুরো কৃতিত্ব কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর, যিনি ভারত জোড়ো যাত্রার সময় তেলেঙ্গানায় জনগণনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সমীক্ষাটি ৮৮,০০০ পৃষ্ঠার তথ্য নিয়ে গঠিত, যা দ্বারে দ্বারে জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। রেড্ডি বলেন, “স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে কেউ এমন জনগণনা করেনি। তেলেঙ্গানা এই ক্ষেত্রে পথিকৃৎ।” তিনি কংগ্রেস সাংসদদের লোকসভা ও রাজ্যসভায় BC সংরক্ষণ বিল পাস করার জন্য রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়গের নেতৃত্বে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘শস্ত্র’ ও ‘শাস্ত্র’-র যুগে ভারত, অপারেশন সিঁদুর এখনও জারি: জানালেন সিডিএস
সোনিয়া গান্ধীর ভূমিকা
তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনে সোনিয়া গান্ধীর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। ২০১৪ সালে ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (UPA) সরকারের চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি তেলেঙ্গানা গঠনের বিল পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রেড্ডি এই প্রসঙ্গে বলেন, “সোনিয়া গান্ধী তেলেঙ্গানার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তাঁর প্রতি তেলেঙ্গানার মানুষের কৃতজ্ঞতা অপরিসীম।”
রেবন্ত রেড্ডির এই মন্তব্য তেলেঙ্গানার রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যেখানে একদিকে কংগ্রেস তেলেঙ্গানার জনগণনাকে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে উদযাপন করছে, সেখানে বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক চাটুকারিতার অংশ বলে সমালোচনা করছে।
সোনিয়া গান্ধীর প্রশংসাপত্র রেড্ডির জন্য ব্যক্তিগতভাবে একটি বড় সম্মান হলেও, এটি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং তেলেঙ্গানার জনগণনার গুরুত্বকে আরও জোরালোভাবে সামনে এনেছে।