উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) চামোলি জেলার থারালি গ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞ দলের হাতে তদন্তভার তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। গত ২২শে আগস্ট ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় গ্রামাঞ্চলের একাধিক জায়গা ভেসে যায়, জমি-ঘরবাড়ি ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, পাহাড় থেকে ভেসে আসা বিশাল পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ ও পাথর বন্যার জলে মিশে গ্রামকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন এখন বৈজ্ঞানিক সমাধানের খোঁজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন দপ্তরের সচিব বিনোদ কুমার সুমন জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ধামী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন থারালি বিপর্যয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা চালানোর। ধামী বলেছেন, “হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের দুর্যোগ বারবার ঘটছে। কেন পাহাড় থেকে এত বিপুল ধ্বংসাবশেষ জলের সঙ্গে নেমে আসছে, কেন গ্রামাঞ্চল বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
ধরালির উদাহরণ
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর আগে উত্তরকাশীর ধরালিতেও (Uttarakhand) একই ধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল। তখন একটি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সমীক্ষা চালায় এবং ভূতাত্ত্বিক কারণ, বৃষ্টিপাতের ধরন, পাহাড়ের মাটির ক্ষয়, জলের প্রবাহ ইত্যাদি খুঁটিয়ে দেখে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী চান, থারালির ক্ষেত্রেও একই ধরনের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হোক, যাতে সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করছেন যে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ক্রমশ বেশি ভঙ্গুর হয়ে উঠছে। অতিবৃষ্টি, হঠাৎ জলপ্রবাহ বৃদ্ধি, পাহাড়ি ঢালে অযথা নির্মাণকাজ, গাছপালা কেটে ফেলা—এসবের কারণে পাহাড়ের মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বিপুল পরিমাণ পাথর-বালি-ধ্বংসাবশেষ নেমে আসছে গ্রাম ও নদীর তীরে। চামোলি জেলার থারালির মতো দুর্ঘটনা তাই ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে।
প্রশাসনের উদ্যোগ
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই দুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পুনর্বাসনের জন্য আলাদা প্যাকেজও ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী ধামী জোর দিয়েছেন, শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক সাহায্য নয়, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এজন্যই বিশেষজ্ঞদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের উদ্বেগ
থারালির (Uttarakhand) মানুষ এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা বলছেন, “প্রতিবছর বর্ষার সময়ে আমরা দুঃশ্চিন্তায় থাকি। জানি না কখন পাহাড় ভেঙে ধ্বংস নামবে।” অনেকেই বিকল্প বাসস্থানের দাবি তুলেছেন। স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারের উচিত নিরাপদ স্থানে তাদের পুনর্বাসন করা।