জম্মু ও কাশ্মীর: প্রবল বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল (Cloudburst and Landslide) ফের বিপর্যয় ডেকে আনল জম্মু ও কাশ্মীরের রামবান (Ramban) এবং রিয়াসি (Reasi) জেলায়। শনিবার ভোরে দুটি পৃথক মেঘভাঙা (Cloudburst) এবং ভূমিধসের ঘটনায় অন্তত ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক পরিবারের ৭ জন সদস্য। এছাড়া, এখনও নিখোঁজ রয়েছেন একজন মহিলা। ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অতি ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি নদীর হঠাৎ জলবৃদ্ধিতে রাজ্যের বহু জেলায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত ৩২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
রিয়াসি জেলার ত্রিকূট পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত প্রসিদ্ধ মাতা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে (Vaishno Devi Shrine) যাত্রা পঞ্চম দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার কাত্রা থেকে মন্দিরের পথে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেকিং রুটের মাঝপথে ভূমিধসে ৩৪ জন তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন। তার পর থেকে যাত্রী সুরক্ষার জন্য যাত্রা স্থগিত রাখা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাত প্রায় ১২.৩০ নাগাদ রামবান জেলার রাজগড় এলাকার দুরবলা নাটনা গ্রামে মেঘভাঙা হয়। প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় দুটি বাড়ি এবং একটি স্কুল ভবন। শনিবার সকাল পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়ে ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বানশাড়া রাজগড়ের ওম রাজ, গাদিগ্রান কুমাটের দ্বারকা নাথ, অশ্বিনী শর্মা এবং তাঁর বোন বীরতা দেবী। নিখোঁজ মহিলার নাম বিদ্যা দেবী। জেলা শাসক মোহাম্মদ এলিয়াস খান জানিয়েছেন, বিদ্যা দেবীর জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। হয়তো তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন বা কাছের পাহাড়ি নদীতে ভেসে গিয়েছেন। উদ্ধারকারী দল এখনও তাঁকে খুঁজছে।
অন্যদিকে, রিয়াসি জেলার মাহোর তেহসিলে শনিবার ভোর রাত ৩টেয় ঘটে আরও এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একটি মেঘভাঙা বৃষ্টিপাত ভূমিধসের সৃষ্টি করে, যাতে বাদ্দর গ্রামের একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে পড়ে। বাড়ির মধ্যে থাকা এক পরিবারের ৭ জন সদস্য মাটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। প্রাথমিক উদ্ধারকাজে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন মাহোরের এসডিপিও ওয়াকার ইউনুস। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন নজির আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ওয়াজিরা বানু এবং তাঁদের পাঁচ ছেলে—ওয়াসিম আহমেদ (৪), মোহাম্মদ মোবারক (৬), মোহাম্মদ আদিল (৮), মোহাম্মদ মোস্তফা (১০) এবং বিলাল আহমেদ (১২)।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জম্মু, কাঠুয়া ও সাম্বা জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি উধমপুর, রিয়াসি, রাজৌরি, রামবান, ডোডা এবং কিশ্তোয়ার জেলার বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি, বজ্রঝড় এবং অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সমস্ত জেলা প্রশাসনকে পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার জম্মু সফরে এসে ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা করবেন বলে জানা গেছে। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী, সেনা ও পুলিশ ইতিমধ্যেই পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এই দুর্ঘটনাগুলি ফের প্রমাণ করল, জম্মু-কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে অতিবৃষ্টি এবং আকস্মিক মেঘভাঙা কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে। প্রশাসন ও আবহাওয়া দফতরের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ সতর্কবার্তা জোরদার করার দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ।