মহাকুম্ভে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী প্রয়াগরাজে যাচ্ছেন। যার ফলে রেলওয়ে স্টেশনগুলো এখন বিশাল ভিড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে বিপুল সংখ্যক যাত্রী সামলাতে।
রবিবার রাত ৯টার দিকে প্রয়াগরাজ জংশন থেকে একটি ঘোষণা করা হয়েছে যে যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে “আপনি এখন আসবেননা। এক ঘন্টা পরে আসুন”।
প্রাথমিকভাবে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকার ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রয়াগরাজ সঙ্গম রেলওয়ে স্টেশনটি এখন ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কারণ সেখানে যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। যারা সঙ্গম স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন, তাদেরকে ফতেহপুর এবং ঝাঁসি রেলওয়ে স্টেশনগুলোর দিকে পাঠানো হয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে অন্য স্টেশনগুলোতে চাপ বাড়াচ্ছে।
এটি কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
ফতেহপুর স্টেশন থেকে যাত্রীদের পাঠানোর পরেও ভিড়ের সমস্যা কমেনি। এক যাত্রী, শুভন্ত কুমার সেন, যিনি লখনউ থেকে ট্রেন ধরার জন্য প্রয়াগরাজে এসেছিলেন, বলেছেন, “এটি কি সঠিক সিদ্ধান্ত? ভিড় এখন ঝাঁসি, রামবাগ এবং ফতেহপুর স্টেশনগুলোতে চলে গেছে।”
অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশ সরকার জানিয়েছে যে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সঙ্গমে ৩৬.৩৫ লাখ পূণ্যার্থী স্নান করেছেন, যার ফলে কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণকারী ভক্তদের সংখ্যা প্রায় ৫৩ কোটি পৌঁছেছে।
স্টেশনগুলোতে বিপর্যস্ত অবস্থা
এই বিশাল ভিড়ের কারণে প্রয়াগরাজের বিভিন্ন রেল স্টেশন—জংশন, সুবেদারগঞ্জ, ফতেহপুর, চেউকি, রামবাগ, ঝাঁসি, এবং প্রয়াগরাজ ক্যান্টনমেন্ট—ভিড়ের চাপে অচল হয়ে পড়েছে। প্রয়াগরাজের নইনি স্টেশনের বাইরে বিশৃঙ্খলার ভিডিও প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও।
রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের মধ্যে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য বারবার ঘোষণা করছে, প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন না করতে এবং যাত্রীদের ফুটওভারব্রিজে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মীরা স্টেশনের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি সিঁড়ি, এসকেলেটর এবং লিফটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে নিরাপত্তার কারণে।
ট্রেন বাতিল, রুট পরিবর্তন
এছাড়াও বহু ট্রেন আটকা পড়েছে বা দেরি করে স্ট্রেশনে পৌছাচ্ছে। বেশ কিছু ট্রেন আটকে থাকার কারণে রুট পরিবর্তন ও বাতিল করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ট্রেন নম্বর ১৫০১৭ লোকমান্য তিলক টার্মিনাস-গোরক্ষপুর এক্সপ্রেস, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করবে, তবে এটি প্রয়াগরাজ বাইপাস করে যাবে। একইভাবে ট্রেন নম্বর ১৫০১৮ গোরক্ষপুর-লোকমান্য তিলক টার্মিনাস এক্সপ্রেসও উল্টো রুটে যাবে।
ঝাঁসি ও প্রয়াগরাজ ক্যান্টনমেন্টে বিরাট ভিড়
যাত্রীদের জন্য ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি, ১২৭টি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছে। তবে রেলওয়ে পুলিশ (আরপিএফ) এবং সরকারী রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) সদস্যরা যাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য স্টেশনে চলাফেরা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
বারানসী ও গোরক্ষপুরেও ভিড়ের চরম অবস্থা
বারানসী এবং গোরক্ষপুর স্টেশনেও একই অবস্থা। বারানসী ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে যাত্রীরা ট্রেনের দরজা এবং জানালার সাথে পাশে দাঁড়িয়ে যান। গোরক্ষপুরেও যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে একাধিক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রাত ১:৪৫ মিনিটে গোরক্ষপুর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমাতে একটি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়।
মহা কুম্ভ মেলা এখনও চলমান থাকায় রেল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ট্রেন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ভিড় নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে এই বিশাল জনগণের চাপ এখনও রেলওয়ে ব্যবস্থার জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
বন্ধ রেল স্টেশন,বাতিল ট্রেন, ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

Advertisements
Advertisements