ওডিশার মালকানগিরি জেলার চিত্রকোন্ডা এলাকায় একটি সরকারি স্কুলে ম্যাট্রিকুলেশন (দশম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা) পরীক্ষা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই এক ক্লাস ১০-এর ছাত্রী সন্তান প্রসব করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার। ছাত্রীটি রাজ্যের এসসি/এসটি বিভাগ পরিচালিত একটি আশ্রম স্কুলের হোস্টেলে থাকতেন। তিনি গর্ভবতী ছিলেন, কিন্তু কোনো স্বাস্থ্য পরামর্শ না পেয়েই তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
মেয়েটির বাবা জানান, “স্কুলে পৌঁছেই আমি জানতে পারি যে আমার মেয়ে সন্তান প্রসব করেছে। আমার মেয়ে হোস্টেলে থাকত এবং দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি আসেনি। হোস্টেলে থাকা ছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একজন অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ নিয়মিত আসেন। তাহলে কীভাবে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি কারও চোখ এড়াল?”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “সংখ্যালঘু ও জাতি কল্যাণ বিভাগের অধীনে পরিচালিত মেয়েদের হোস্টেলে পুরুষদের প্রবেশের অনুমতি নেই। আমরা জানি না, সে কিভাবে গর্ভবতী হলো।”
অন্যান্য শিক্ষকরা এই ঘটনার দায় হোস্টেল ওয়ার্ডেনের উপর চাপিয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ এবং জেলা কল্যাণ কর্মকর্তা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের এসসি/এসটি বিভাগ পরিচালিত স্কুলগুলিতে প্রায় ১.৫৮ লক্ষ ছাত্রী পড়াশোনা করে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এই স্কুলগুলিতে ১৬টি গর্ভধারণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল, যার মধ্যে ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৫টি গর্ভধারণের ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।
এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। জানুয়ারি ২০১৯ সালে ধেনকানাল জেলার বেল্টিকিরি আশ্রম স্কুলে একটি ১৩ বছর বয়সী আদিবাসী মেয়ে, যিনি ক্লাস ৮-এ পড়তেন, পেটে ব্যথার অভিযোগ করলে জানা যায় তিনি সাত মাসের গর্ভবতী। অভিযোগ উঠেছিল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্তিক গৌর তাকে ধর্ষণ করেছেন।
এই স্কুলগুলিতে ছাত্রীদের গর্ভধারণের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মূলত যৌন নির্যাতন, দুর্বল তদারকি এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দুর্বলতার সাথে যুক্ত। তবে এই গর্ভধারণের ঘটনাগুলির সঠিক সংখ্যা বিভাগ দ্বারা নিয়মিত প্রকাশ করা হয় না।
কিশোরী ছাত্রীদের গর্ভধারণ রোধ করতে রাজ্য সরকার ৩০০০ ম্যাট্রন এবং ৩৩৬ জন অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ নিয়োগ করেছে। এছাড়াও, হোস্টেলের পড়ুয়াদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিটি হোস্টেলে একজন মহিলা রান্না কর্মী, মহিলা প্রহরী এবং মহিলা সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কোনো মহিলা সঙ্গী ছাড়া হোস্টেলে প্রবেশ করতে পারবে না।
এসসি/এসটি কল্যাণ বিভাগ পরিচালিত আবাসিক স্কুল এবং হোস্টেলগুলিতে গেটের উভয় পাশে, ওয়াশরুম এবং বারান্দায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলি ছাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা সামাজিক নিরাপত্তা ও তদারকির গুরুত্বকে আবারও তুলে ধরেছে। আশ্রম স্কুলগুলিতে ছাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। অভিভাবক ও শিক্ষকরা দাবি করেছেন, হোস্টেল ও স্কুলগুলিতে নিয়মিত মনিটরিং এবং কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার আশ্রম স্কুলগুলিতে ছাত্রীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা জানিয়েছে। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘট সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।