HomeBharatনতুন নীতিতে সংসদ ভবনে CISF মোতায়েন আরও কঠোর হল

নতুন নীতিতে সংসদ ভবনে CISF মোতায়েন আরও কঠোর হল

- Advertisement -

দেশের সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা আরও মজবুত করতে বড় পদক্ষেপ নিল সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (CISF)। সংস্থার চলমান সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে সংসদ নিরাপত্তার জন্য স্বতন্ত্র ও সংশোধিত নতুন পোস্টিং নীতি চালু করা হয়েছে। এই নীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো—এখন থেকে সংসদ ভবনে নিরাপত্তায় থাকা CISF কর্মীদের চাকরির মেয়াদ বিদ্যমান তিন বছরের পরিবর্তে চার বছর করা হয়েছে। নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উপযুক্ত বিবেচিত হলে তাঁদের টেনিউর আরও এক বছর অতিরিক্ত বাড়ানো যাবে।

CISF সূত্র জানিয়েছে, সংসদ ভবন অঞ্চলের অনন্য ও অত্যন্ত সংবেদনশীল নিরাপত্তা কাঠামো বিবেচনা করে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের সংসদ সদস্যদের যাতায়াতের ধরন, তাঁদের চলাফেরার রুটিন, গেট-অ্যাক্সেস প্যাটার্ন এবং সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের স্ট্রাকচার ও গতিশীলতার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা কর্মীরা এই বিষয়গুলিতে বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন—এ কারণেই টেনিউর বাড়ানো হয়েছে বলে CISF জানিয়েছে।

   

একই সঙ্গে নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, বাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে প্রতিবার টেনিউর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের রোটেশন করা হবে। প্রতি বছর মোট অনুমোদিত সংখ্যার একটি অংশ বদলি করা হবে, যাতে ইউনিটে একদিকে যেমন কার্যকরী ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তেমনি অন্যদিকে নিয়মিত নতুন কর্মীর যোগদানে “নতুন রক্তের সঞ্চার” নিশ্চিত হয়। এতে অভিজ্ঞতা ও নবীনতার একটি ব্যালান্স তৈরি করে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।

CISF জানিয়েছে, সংসদ ভবনের নিরাপত্তা অন্য যেকোনও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার তুলনায় বহুস্তরবিশিষ্ট এবং জটিল। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের পরিচিতি—

  • সংসদ সদস্যদের মুখ ও চলাফেরা,
  • বিভিন্ন প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টের “সাধারণ বনাম অস্বাভাবিক” গতিবিধি,
  • বিভিন্ন ভিজিটর ক্যাটাগরি,
  • অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ওথেনটিকেশন প্যাটার্ন,

এসবই নিরাপত্তা-ঝুঁকি চিহ্নিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সঠিক পরিচয় শনাক্তকরণ (accurate identification) এবং হুমকি সনাক্তকরণ (layered threat detection) অনেকাংশেই নির্ভর করে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা জওয়ানদের ওপর। তাঁদের চোখে অনিয়মের ঝুঁকি দ্রুত ধরা পড়ে। ফলে কর্মীদের টেনিউর বাড়ানোতে নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো হবে এবং জটিল পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতাও বাড়বে।

CISF আরও জানিয়েছে, এই নীতি “অপারেশনাল কন্টিনিউটি”—অর্থাৎ একই দলের সঙ্গে কাজ করার অভ্যস্ততা ও সমন্বয় বজায় রাখবে, যা সঙ্কট মোকাবিলায় অত্যন্ত জরুরি। সংসদ ভবন কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা প্রহরীরা শুধু নজরদারি করেন না, বরং হঠাৎ পরিস্থিতি সামলানো, VIP movement ম্যানেজমেন্ট, crowd control, access verification—এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সঠিক সময়ে ও যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে পালন করেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ইউনিটে নিয়োজিত কর্মীরা যত বেশি সময় দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের মধ্যে তত বেশি অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও সামগ্রিক সচেতনতা তৈরি হবে। তা সরাসরি নিরাপত্তার মান বাড়াবে।” তিনি আরও জানান যে, সংসদ ভবনের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে নতুনদের জন্য প্রাথমিকভাবে অনেক কিছু বুঝতে সময় লাগে, কিন্তু দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা কর্মীরা লক্ষ্য, চলাচল, সন্দেহজনক আচরণ—সবকিছু দ্রুত ধরতে পারেন।

এই নতুন পোস্টিং নীতি কার্যকর হলে সংসদ ভবন কমপ্লেক্সে CISF-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও মানবসম্পদ-সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। দেশের গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে সুরক্ষা দিতে CISF যে ধারাবাহিকভাবে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে—এই নীতি সেই প্রচেষ্টারই আরেকটি বড় পদক্ষেপ।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular