ওয়াকফ সংশোধনী বিলের (Waqf Amendment Bill) বিরুদ্ধে মুসলিম সংগঠনগুলির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিল দেশের খ্রীস্টান সংগঠনগুলি। খ্রিস্টান সাংসদরা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তাদের মতে, এই বিলটি সংবিধানে বর্ণিত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে, এবং এটি দেশের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সময়, খ্রিস্টান সাংসদরা তাদের নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার করেন, এবং তারা বলেন যে, এ ক্ষেত্রে তাদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন।
মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোসের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সোনিয়া গান্ধী, দাবি বিজেপির
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সাংসদদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেস সাংসদ হিবি ইডেন, ডিন কুরিয়াকোস, আন্তো অ্যান্টনি, সিপিআই(এম) সাংসদ জন ব্রিটাস, এবং আরও অনেকেই। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান, যিনি পরে এই আলোচনায় যোগ দেন। তারা সবাই একমত হন যে, এ ধরনের আইন সংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, এবং এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা বিপন্ন করে।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি মূলত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পত্তি এবং এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নিয়মকানুনের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু খ্রিস্টান সাংসদরা বলছেন, এই আইন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকারকে আঘাত করে। তারা জানাচ্ছেন, দেশের সংবিধান ধর্মীয় সমতার ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং কোনো আইন যদি তা লঙ্ঘন করে, তবে তা দেশের একতায় বিভাজন সৃষ্টি করবে।
ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সংঘাত আবহে বিদেশ সচিবের বাংলাদেশ সফর, একান্ত বৈঠকে ফয়সালা?
এছাড়া, সম্মেলনে খ্রিস্টান সাংসদরা আরও বলেন যে, ধর্মীয় স্বাধীনতা সকল মানুষের অধিকার, এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করেন, মুসলিমদের অধিকার রক্ষা করা খ্রিস্টান সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব, কারণ ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো মানে সকলের জন্য সমান অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, এই বিলের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে সংখ্যালঘুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তার মতে, দেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে যদি এমন একটি আইন পাশ হয়, তবে তা দেশের ধর্মীয় শান্তি ও ঐক্যকে নষ্ট করতে পারে। হিবি ইডেনও এ বিষয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পরিবর্তন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধের পরিপন্থী, এবং এটি সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে।’
এদিকে, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান আলোচনায় যোগ দিয়ে বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে তিনি একাধিকবার উল্লেখ করেন যে, সরকার সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বদ্ধপরিকর। তবে, তার বক্তব্যের মধ্যে সরকার পক্ষের ব্যাখ্যা ও প্রতিরক্ষা ছিল, যা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
শিগগির দলের অন্তিম সংস্কার করবেন রাহুল: কংগ্রেস নেতা
সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এই আইন ও সংশোধনী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়া এবং সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় একত্রিত হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা। খ্রিস্টান সাংসদরা এই পরিস্থিতিতে সবাইকে একযোগভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সরকারের কাছে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি করেছেন। তাদের বিশ্বাস, ধর্মীয় সমতা ও শান্তির পক্ষে এগিয়ে যেতে হলে, সরকারের উচিত সকল সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং সংবিধানিকভাবে সকলের অধিকার নিশ্চিত করা।