যাজপুরে ভয়ঙ্কর কলেরা সংক্রমণে ম্লান রজা উৎসবের উদ্দীপনা

jajpur epidemic

ওড়িশার যাজপুর (jajpur) জেলায় তিন দিনব্যাপী রজা উৎসবের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যেও কলেরা সংক্রমণের কারণে জেলা প্রশাসন শনিবার (১৪ জুন, ২০২৫) সম্প্রদায়ভিত্তিক ভোজ নিষিদ্ধ করেছে। এই পদক্ষেপটি জেলায় কলেরার প্রাদুর্ভাব রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ একটি পরামর্শ জারি করে জনগণকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে। রথযাত্রার আগে এটি ওড়িশার সবচেয়ে বড় উৎসব বলেও পরিচিত।

Advertisements

কলেরা প্রাদুর্ভাব এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া (jajpur) 

যাজপুর (jajpur) জেলায় গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কলেরার ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ৪১টি নমুনার মধ্যে আটটিতে কলেরা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও, প্রায় ২০০টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, যা কোনও নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই পরিস্থিতিতে, রজা উৎসবের সময় ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়ভিত্তিক ভোজ, যা বড় জনসমাগমের সঙ্গে জড়িত, নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জলের ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য জলের উৎস জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ জারি করেছে। জনস্বাস্থ্য পরিচালক ড. নীলকান্থ মিশ্র একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে জানিয়েছেন, গত চার দিনে জেলায় ৭৫০ জনের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এর মধ্যে প্রায় ৩০০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, এবং ৪৫০ জন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে, ৩০ জন গুরুতর রোগী কটকের এসসিবি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রজা উৎসব এবং এর তাৎপর্য

রজা পার্বন, যা মিথুন সংক্রান্তি নামেও পরিচিত, ওড়িশার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও কৃষি উৎসব। এই তিন দিনের উৎসব নারীত্ব এবং পৃথিবীর উর্বরতার উদযাপন করে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এই সময়ে ভূমি দেবী (বিষ্ণুর সঙ্গিনী) তাঁর ঋতুস্রাবের মধ্য দিয়ে যান।

উৎসবের চতুর্থ দিনে ভূমি দেবীর আনুষ্ঠানিক স্নান (বাসুমতী স্নান) অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে ঐতিহ্যবাহী দোলনা (যেমন রাম দোলি, চর্কি দোলি, পট্টা দোলি) এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক ভোজের আয়োজন করা হয়। তবে, এই বছর কলেরার আতঙ্কের কারণে ভোজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

Advertisements

স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ

স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “যারা ডায়রিয়ায় ভুগছেন, তাদের অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে। আমরা সংক্রমণের উৎস শনাক্ত করতে এবং আক্রান্তদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য নজরদারি জোরদার করেছি।” জনগণকে হাতের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাড়িতে রান্না করা খাবার ও ফুটানো বা ফিল্টার করা জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নদী, নালা বা পুকুরের জল ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা (jajpur) 

কলেরার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় যাজপুর (jajpur)  জেলা প্রশাসন সরকারি কর্মচারীদের রজা উৎসবের ছুটি বাতিল করেছে। জেলা কালেক্টর পি. অন্বেষা রেড্ডি একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, ১৪ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সমস্ত সরকারি অফিস স্বাভাবিকভাবে খোলা থাকবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের পরিষেবা ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও, যাজপুর (jajpur) এবং কটকের এসসিবি মেডিকেল কলেজে বিশেষ চিকিৎসা দল মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্য পর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ দলও আক্রান্ত এলাকায় কাজ করছে।

বেতন ৩,৫০০ টাকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩.৫ কোটি! গ্রেফতার পঞ্চায়েত কর্মী

পরিস্থিতির উন্নতি

প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ডায়রিয়ার ঘটনা কিছুটা কমছে, এবং গত তিন দিনে ৪৫০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। শুক্রবার মাত্র ২০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রশাসন আশা করছে যে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

যাজপুরে (jajpur) কলেরার প্রাদুর্ভাবের কারণে রজা উৎসবের ঐতিহ্যবাহী ভোজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বড় পরিবর্তন। তবে, এই পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।