সাইবার প্রতারণায় চিনা নেটওয়ার্ক, ভারতীয়দের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লুট!

কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪: সাইবার প্রতারণার (Chinese Scammers) একটি নতুন কৌশল সামনে এসেছে, যেখানে চিনা প্রতারকেরা ভারতীয় নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা…

A dark Red and ominous image of a computer screen with a message that reads 'Transaction Successful' in green letters. The screen is surrounded by a dimly lit room with a few shadowy figures in the background. The image is meant to convey the feeling of a major cyber fraud that has just taken place.

কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪: সাইবার প্রতারণার (Chinese Scammers) একটি নতুন কৌশল সামনে এসেছে, যেখানে চিনা প্রতারকেরা ভারতীয় নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা লুট করার অভিযোগ উঠেছে। স ম্প্রতি তদন্তে জানা গেছে, চিনা প্রতারকরা ভারত থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লুট করেছে, যা বিভিন্ন গেম ও বিনিয়োগ স্কিমের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাজ করে আসছিলেন।

মলিন পরিকল্পনা এবং প্রতারণার কৌশল
এই সাইবার প্রতারণার মূল কৌশল হল অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেওয়া। ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে একাধিক ফেক অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিপুল মুনাফার টোপ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতারকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন গেম এবং ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের প্রচার করে, যেখানে তারা ভারতীয়দেরকে সহজেই আকৃষ্ট করে।

   

এই ফাঁদে পা দিলেই মানুষজন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রদান করে দেন, যা পরবর্তীতে লুটের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। তদন্তকারী সংস্থাগুলি জানায়, ভারতীয়দের অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে এবং এই টাকা বিটকয়েনের মাধ্যমে চিনের প্রতারকদের কাছে চলে যাচ্ছে।

গ্রেপ্তার হওয়া এজেন্টদের বক্তব্য
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন এজেন্টের মধ্যে একজন, যিনি দিল্লির বাসিন্দা, জানিয়েছেন, “আমরা কখনোই বুঝতে পারিনি যে আমাদের কাজের পেছনে কী ধরনের প্রতারণা রয়েছে। আমরা শুধুমাত্র কাজের জন্য নিয়োগিত হয়েছিলাম।” অন্যদিকে, অপর একজন এজেন্ট দাবি করেছেন যে, তিনি প্রতারণার বিষয়ে কিছু জানতেন না এবং সবকিছুই ছিল কেবলমাত্র একটি ইনভেস্টমেন্ট স্কিম।

তদন্তকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছেন যে, এই তিনজন এজেন্টকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা এখন অন্যান্য সহযোগীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

প্রতারকদের নেটওয়ার্ক এবং কার্যক্রম
প্রতারণাকারীরা একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করছে, যা ভারতীয় নাগরিকদের আর্থিক তথ্য সংগ্রহের উপর ভিত্তি করে। এই নেটওয়ার্কে ভারতীয় এজেন্টরা মূল ভূমিকা পালন করছে, যারা চিনের প্রতারকদের সঙ্গে যুক্ত।

চিনা প্রতারকরা তাদের অপারেশন চালাতে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, যা ভারতীয় সরকারের নজর এড়াতে সহায়ক হচ্ছে। এসব প্রতারণার মূল উদ্দেশ্য হল বিটকয়েনের মাধ্যমে লুট করা অর্থকে দ্রুত স্থানান্তরিত করা।

দেশব্যাপী তদন্ত এবং ব্যবস্থা
ভারতের সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালাচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, প্রতারণার শিকার হওয়া অনেক ভারতীয় নাগরিকই তাদের অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রদান করেছেন বিশ্বাসের ভিত্তিতে।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলি সতর্ক করেছে যে, যেকোনো ধরনের আকর্ষণীয় মুনাফার টোপের প্রতি আগ্রহী হওয়ার আগে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তারা আরও জানিয়েছে যে, সাধারণ মানুষকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন।

সরকারের পদক্ষেপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি
ভারত সরকার এই ধরনের সাইবার প্রতারণা মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাইবার নিরাপত্তা এবং সাইবার আইন সংক্রান্ত কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনও চালানো হচ্ছে।

জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়া কোনও ধরনের বিনিয়োগ বা অর্থনৈতিক চুক্তিতে জড়িয়ে না পড়েন। প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার না করার জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

চিনা প্রতারকদের দ্বারা ভারতীয় নাগরিকদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা লুটের এই ঘটনা একদিকে যেমন ভয়ঙ্কর, অন্যদিকে এটি সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতনতা এবং প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করছে। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের গম্ভীর মনোভাব থাকা উচিত এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

সরকার, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এবং সাধারণ মানুষকে একত্রিত হয়ে সাইবার প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয় এবং সমাজে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।