ভোপাল ২ ডিসেম্বর: ২০২৫ সালেও মধ্যপ্রদেশে বাল্যবিবাহ যেন এক অমোচনীয় দুঃস্বপ্ন (Child marriage in Madhya Pradesh)। সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরের প্রান্ত প্রতিটি জায়গায় শিশুরা এখনও প্রথা আর কুসংস্কারের যাঁতাকলে আটকে পড়ছে। তার চেয়েও উদ্বেগজনক বিষয় অভিযোগ এই সংকট মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের উদাসীনতা দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
কয়েক দিন আগে Just Rights for Children নামে এক সংগঠন জানায়, গত দুই বছরে তারা মধ্যপ্রদেশের ৪১টি জেলায় ৩৬,৮৩৮টি বাল্যবিবাহ রুখেছে এবং ৪,৭৭৭ জন শিশুকে পাচারচক্রের হাত থেকে উদ্ধার করেছে। এত বিপুল সংখ্যক হস্তক্ষেপের মধ্যেও বাল্যবিবাহ কমেনি—বরং সরকারি তথ্য বলছে, প্রতি বছরই সংখ্যা বাড়ছে।
‘সম্মানহানি হচ্ছে…!’ ফেডারেশনকে ‘লিগ্যাল নোটিস’ লাল-হলুদ ফুটবলারের
বিষয়টি নিয়ে যখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাজ্যের মহিলা ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী নির্মলা ভুরিয়া জানান “আমার কাছে এমন কোনও তথ্য নেই এ নিয়ে আমি খোঁজ নেব।” কিন্তু আসল বিস্ময় এখানেই যে তথ্য নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সেটি ছিল তাঁরই দফতরের তরফে বিধানসভায় জমা দেওয়া নথি। বিরোধীরা বিষয়টি তুলতেই মন্ত্রী নিজ বিভাগের তথ্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। প্রশাসনিক উদাসীনতার এই ছবি রাজ্যের শিশু অধিকার আন্দোলনকারীদের আরও চিন্তিত করে তুলেছে।
এদিকে রাজগড় জেলার মাঠঘাটে ঘুরলে দেখা যায় আরও ভয়ংকর বাস্তবতা। সেখানের বাল্যবিবাহের হার ৪৬ শতাংশ জাতীয় গড় ২৩.৩ শতাংশের প্রায় দ্বিগুণ। সমাজের এই বিপর্যস্ত চিত্র বিধানসভায়ও দেখা যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বাল্যবিবাহের রিপোর্টেড মামলা: ৪৫০, ২০২২ সালে: ৫১৯, ২০২৩ সালে: ৫২৮, ২০২৪ সালে: ৫২৯, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত: ৫৩৮। অর্থাৎ, প্রতিটি বছরেই গ্রাফ উপরে উঠছে কোনও ব্যবস্থা নেই, নেই কোনও দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণ।
কংগ্রেস নেতা জয়বর্ধন সিং প্রশ্ন তোলেন “সরকার বলছে সচেতনতা বাড়ছে, কিন্তু সংখ্যাগুলো কি সে কথার সঙ্গে যায়? কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে কে?” সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশই নাবালিকা ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুধু আইন কঠোর হলেই হবে না, বাল্যবিবাহকে রুখতে একই দৃঢ়তা দরকার।
The Prohibition of Child Marriage Act, 2006 অনুযায়ী পুরুষের ন্যূনতম বয়স ২১, নারীর ১৮। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জোর করে বিবাহ দিলে বাবা-মা থেকে শুরু করে পুরোহিত সবাই আইনের আওতায় পড়তে পারেন। কিন্তু বাস্তবে আইন প্রয়োগের দুর্বলতা শিশুদের ফেলে দিয়েছে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে।
মধ্যপ্রদেশের গ্রামগুলিতে আজও চুড়ি-বালা আর গোঁফ-দাড়ি ওঠার আগেই বিয়ের মালা পরিয়ে দেওয়া হয় শিশুদের গলায়। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ খেলতে কিন্তু কুসংস্কারের দড়ি তাদের স্বপ্নকে আজও শিকলবন্দি করে রাখছে। প্রশ্ন একটাই—এই হারিয়ে যাওয়া শৈশব কে ফিরিয়ে দেবে?
