মার্কিন মুলুকে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ প্রধান বিচারপতির

ভারতের প্রধান বিচারপতি (chief-justice) বি আর গাভাই বলেছেন, বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অসদাচরণের ঘটনা জনগণের আস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা সমগ্র বিচারব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রতি বিশ্বাস…

chief-justice about judiciary transparency

ভারতের প্রধান বিচারপতি (chief-justice) বি আর গাভাই বলেছেন, বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অসদাচরণের ঘটনা জনগণের আস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা সমগ্র বিচারব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রতি বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে “বিচারিক বৈধতা ও জনগণের আস্থা বজায় রাখা” বিষয়ে একটি গোলটেবিল সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।

এই সম্মেলনে তিনি বিচারপতিদের (chief-justice) অবসরোত্তর চাকরি এবং রাজনৈতিক নিয়োগের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, যদি কোনো বিচারপতি অবসরের পরপরই সরকারি নিয়োগ গ্রহণ করেন বা বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তা “গুরুতর নৈতিক উদ্বেগ” সৃষ্টি করে এবং জনগণের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের মুখোমুখি হয়।

   

বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অসদাচরণ

সিজেআই গাভাই (chief-justice) বলেন, “প্রতিটি ব্যবস্থা, যতই শক্তিশালী হোক না কেন, পেশাগত অসদাচরণের সমস্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত, বিচারব্যবস্থার মধ্যেও দুর্নীতি ও অসদাচরণের কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এই ধরনের ঘটনা জনগণের আস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সমগ্র ব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রতি বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে।

তবে, এই আস্থা পুনর্নির্মাণের পথ হলো দ্রুত, দৃঢ় এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা। ভারতে, যখনই এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, সুপ্রিম কোর্ট (chief-justice) তাৎক্ষণিকভাবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।” তাঁর এই মন্তব্য এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এসেছে। সম্প্রতি তাঁর দিল্লির সরকারি বাসভবন থেকে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় এই অভিযোগ উঠেছে।

বিচারিক বৈধতা ও জনগণের আস্থা

প্রধান বিচারপতি (chief-justice) জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে বিচারব্যবস্থার কেবল ন্যায়বিচার প্রদানই নয়, এটিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা উচিত যা সত্যকে ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড় করানোর যোগ্য। তিনি বলেন, “বিচারিক বৈধতা এবং জনগণের আস্থা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত।

বৈধতা এবং আস্থা কোনো জোরপূর্বক আদেশের মাধ্যমে অর্জিত হয় না, বরং আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই আস্থার কোনো ক্ষয়ক্ষতি বিচারব্যবস্থার সাংবিধানিক ভূমিকাকে দুর্বল করে, যা অধিকারের চূড়ান্ত বিচারক হিসেবে কাজ করে। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা গণতান্ত্রিক গুণ।”

অবসরোত্তর নিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ

বিচারপতিদের (chief-justice) অবসরোত্তর নিয়োগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সিজেআই বলেন, এই ধরনের নিয়োগের সময় এবং প্রকৃতি জনগণের বিচারব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। এটি এমন ধারণা তৈরি করতে পারে যে ভবিষ্যতের সরকারি নিয়োগ বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা বিচারিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।

তিনি বলেন, “ভারতে বিচারপতিদের জন্য একটি নির্দিষ্ট অবসরের বয়স নির্ধারিত আছে। যদি কোনো বিচারপতি অবসরের পরপরই সরকারের কাছ থেকে অন্য কোনো নিয়োগ গ্রহণ করেন বা বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তা উল্লেখযোগ্য নৈতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করে এবং জনগণের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের মুখোমুখি হয়।”

তিনি (chief-justice)আরও বলেন, কোনো বিচারপতি রাজনৈতিক পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। এটি স্বার্থের সংঘাত বা সরকারের সঙ্গে সুবিধা অর্জনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি জানান, “আমি এবং আমার অনেক সহকর্মী প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আমরা অবসরের পর সরকারের কাছ থেকে কোনো পদ বা ভূমিকা গ্রহণ করব না। এই প্রতিশ্রুতি বিচারব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রচেষ্টা।”

Advertisements

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পদক্ষেপ (chief-justice)

ডিজিটাল যুগে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং দ্রুত ধারণা গঠনের প্রেক্ষাপটে সিজেআই বলেন, বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীনতা বজায় রেখে অ্যাক্সেসযোগ্য, বোধগম্য এবং জবাবদিহিমূলক হতে হবে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের স্বচ্ছতা ও অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়ানোর পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বিচারপতিদের সম্পদের স্বেচ্ছায় প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট (chief-justice) একটি নিবেদিত পোর্টাল রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেখানে বিচারপতিদের ঘোষণাগুলো প্রকাশ করা হয়, যা প্রমাণ করে যে বিচারপতিরা অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের মতো একই ধরনের পরীক্ষার জন্য নিজেদের উন্মুক্ত রাখতে ইচ্ছুক।”

তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছতা বাড়াতে সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক বেঞ্চের মামলাগুলোর লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করেছে। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, “যেকোনো শক্তিশালী হাতিয়ারের মতো, লাইভ স্ট্রিমিংও সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। ভুয়া খবর বা প্রেক্ষাপটের বাইরে আদালতের কার্যক্রম জনগণের ধারণাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।”

প্রাক্তন লাল-হলুদ কোচ কুয়াদ্রাতের কাঁধে নতুন দায়িত্ব

কলেজিয়াম ব্যবস্থার প্রতিরক্ষা

সিজেআই কলেজিয়াম ব্যবস্থার সমর্থনে বলেন, ১৯৯৩ সালের আগে নির্বাহী বিভাগের হাতে বিচারপতি নিয়োগের চূড়ান্ত ক্ষমতা ছিল। তিনি বলেন, “এই সময়ে নির্বাহী বিভাগ দুবার সর্বোচ্চ জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের বাদ দিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছিল, যা প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ছিল।”

কলেজিয়াম ব্যবস্থা নির্বাহী হস্তক্ষেপ কমাতে এবং বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে প্রবর্তিত হয়েছিল। তিনি বলেন, “কলেজিয়াম ব্যবস্থার সমালোচনা থাকতে পারে, তবে যেকোনো সমাধান বিচারিক স্বাধীনতার মূল্যে আসা উচিত নয়। বিচারপতিদের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।”

প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের (chief-justice) এই বক্তৃতা বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং স্বাধীনতার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। তিনি জোর দিয়েছেন যে বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখতে দ্রুত এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, বিচারপতিদের অবসরোত্তর নিয়োগ এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এড়ানোর মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করা সম্ভব।