‘ব্লু স্টার’ মন্তব্যে চিদাম্বরমের বিতর্কিত কথা, শিখদের পুরনো ক্ষত জাগ্রত

chidambarams-blue-star-comment-fuels-sikh-resentment-undermines-congress-unity

গত সপ্তাহে হিমাচল প্রদেশের কাসৌলিতে অনুষ্ঠিত খুশওয়ন্ত সিং সাহিত্য উৎসবে কংগ্রেস নেতা পি. চিদাম্বরম (P. Chidambaram) যে মন্তব্যটি করেছিলেন, তা ছিল আসলে একটি বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা। তবে তার একটি বক্তব্য ততটাই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যা কংগ্রেসের এক পুরনো আঘাতকে আবার জাগিয়ে তুলেছে—১৯৮৪ সালের ব্লু স্টার অভিযান।

চিদাম্বরম অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “কোনো সামরিক কর্মকর্তার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা নয়, তবে গোল্ডেন টেম্পল উদ্ধার করার জন্য ব্লু স্টার ছিল ভুল পথ। কিছু বছর পর আমরা সঠিক পথ দেখিয়েছিলাম (অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার), যেখানে সেনাকে বাইরে রেখে গোল্ডেন টেম্পল উদ্ধার করা হয়েছিল। ব্লু স্টার ছিল ভুল পদ্ধতি, এবং আমি একমত যে শ্রীমতি [ইন্দিরা] গান্ধী তার জীবন দিয়ে সেই ভুলের মূল্য চুকিয়েছেন। কিন্তু সেই ভুল ছিল একটি সামগ্রিক সিদ্ধান্ত—সেনা, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্ত। শুধু শ্রীমতি গান্ধীকেই দোষ দেওয়া যায় না।”

চিদাম্বরমের এই মন্তব্য, বিশেষত “ব্লু স্টার ছিল ভুল” এবং “শ্রীমতি গান্ধী তার জীবন দিয়ে সেই ভুলের মূল্য চুকিয়েছেন” কথাগুলি শিখদের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৪ সালের ব্লু স্টার অভিযানে শিখ ধর্মস্থল স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহী নেতা জার্নেল সিং ভিঅরাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেছিল। এর ফলে বহু সিখ মন্দিরে মৃত্যুর মুখে পড়েন এবং সিখ সমাজের মনে গভীর ক্ষত তৈরি হয়।

Advertisements

চিদাম্বরমের এই মন্তব্য অনেকেই এরকমভাবে গ্রহণ করেছেন যে, এটি ব্লু স্টার অভিযানের পক্ষে একটি ন্যায়সঙ্গত ব্যাখ্যা নয়, বরং এটি ওই সময়কার সরকার ও প্রশাসনের সমালোচনা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা। সিখ সমাজের একটি বড় অংশ মনে করে, অপারেশন ব্লু স্টার শুধুমাত্র ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ঘটেনি, বরং এটা ছিল একটি জাতীয় সংকট, যেখানে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ফলে সিখ ধর্মীয় স্থানকে লক্ষ্য করা হয় এবং সাধারণ সিখদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়।

যদিও চিদাম্বরম নিজে ব্লু স্টার অভিযানের জন্য দায়ী করেননি একমাত্র ইন্দিরা গান্ধীকে, তার মন্তব্য শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে তার প্রতি এক ধরণের অনাস্থা তৈরি করেছে। ব্লু স্টার নিয়ে এই বিতর্কের ফলে কংগ্রেসের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক দ্বিধা এবং অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ১৯৮৪ সালের ঘটনার পর, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কখনোই সঠিকভাবে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়নি, যা আজও শিখদের মধ্যে ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিদাম্বরমের মন্তব্য, যা মূলত এক বুদ্ধিদীপ্ত সাহিত্যিক আড্ডার অংশ হিসেবে ছিল, এখন একটি রাজনৈতিক বিতর্কের রূপ নিয়েছে। এই বিতর্ক কংগ্রেসের জন্য নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা দলের একতাবদ্ধতার প্রতি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Advertisements