রাজ্যসভার সাংসদ এবং কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা পি. চিদম্বরম (Chidambaram)ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে রাজ্যগুলোর ‘নির্বাচনী চরিত্র’ পরিবর্তনের চেষ্টার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। চিদম্বরম দাবি করেছেন। তামিলনাড়ুতে ৬.৫ লক্ষ ‘অভিবাসী শ্রমিক’কে ভোটার হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে, যা তিনি “উদ্বেগজনক” এবং “অবৈধ” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে “ক্ষমতার অপব্যবহার” হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এটির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং আইনি লড়াই চালানো প্রয়োজন। এই অভিযোগ বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার বিতর্কের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে।
বিহার এসআইআর বিতর্ক এবং তামিলনাড়ুর ভোটার সংযুক্তি
চিদম্বরম বলেন, “বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। যেখানে বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের ভোটাধিকার হরণের ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে তামিলনাড়ুতে ৬.৫ লক্ষ ব্যক্তিকে ভোটার হিসেবে যুক্ত করার খবর উদ্বেগজনক এবং সম্পূর্ণ অবৈধ।”
তিনি এই অভিবাসী শ্রমিকদের “স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত” হিসেবে চিহ্নিত করাকে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি অপমান এবং তামিলনাড়ুর জনগণের নির্বাচনী অধিকারে মারাত্মক হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি কোনো অভিবাসী শ্রমিকের পরিবার বিহারে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, তাহলে তাকে তামিলনাড়ুতে কীভাবে ‘স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত’ হিসেবে গণ্য করা যায়? এই শ্রমিকরা কি ছট পূজার সময় বিহারে ফিরে আসেন না? তাহলে তারা কেন তাদের নিজ রাজ্যে ভোট দিতে পারবেন না?”
নির্বাচন কমিশনের উপর অভিযোগ
চিদম্বরম নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে রাজ্যগুলোর নির্বাচনী চরিত্র এবং প্যাটার্ন পরিবর্তনের একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “ইসিআই তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং আইনি লড়াই চালাতে হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির স্থায়ী এবং আইনি বাসস্থান থাকা আবশ্যক।
অভিবাসী শ্রমিকদের বিহার বা তাদের নিজ রাজ্যে এমন বাসস্থান রয়েছে, তাই তাদের তামিলনাড়ুতে ভোটার হিসেবে যুক্ত করা আইনের লঙ্ঘন। তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরকে ট্যাগ করে এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন বিতর্ক
বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬ লক্ষ ভোটারকে ‘স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত’ বা ‘অনুসন্ধানে অপ্রাপ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, গত ২০ বছরে ভোটার তালিকায় বড় আকারে সংযুক্তি এবং বাদ দেওয়ার ফলে ডুপ্লিকেট এন্ট্রির সম্ভাবনা বেড়েছে, যা সংশোধনের জন্য এই প্রক্রিয়া প্রয়োজনীয়।
তবে, বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), এই প্রক্রিয়াকে বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটারদের ভোটাধিকার হরণের একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তারা সংসদের উভয় কক্ষে এই ইস্যুতে আলোচনার দাবি জানিয়েছে।
তামিলনাড়ুর প্রতিক্রিয়া
তামিলনাড়ুতে ৬.৫ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার বিষয়টি রাজ্যের শাসক দল দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজগম (ডিএমকে) এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। ডিএমকের সাধারণ সম্পাদক দুরাইমুরুগান বলেন, “এই অভিবাসী শ্রমিকরা তামিলনাড়ুতে কাজ করতে এসেছেন, কিন্তু তাদের এখানে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।” তিনি এই পদক্ষেপকে তামিলনাড়ুর নির্বাচনী অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
পরিযায়ী শ্রমিক নিগ্রহের প্রতিবাদে মায়ো রোডে শশী পাঁজার নেতৃত্বে তৃণমূলের বিক্ষোভ
রাজনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ের আহ্বান
চিদম্বরম তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কার্যকলাপ নির্বাচনী গণতন্ত্রের অখণ্ডতার উপর হুমকি। তিনি বলেন, “বিহারে ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে, আর তামিলনাড়ুতে অবৈধভাবে ভোটার সংযুক্ত করা হচ্ছে।
এই ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিকভাবে এবং আইনিভাবে লড়তে হবে।” তিনি এই ইস্যুতে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন, যা বিরোধী দলগুলোর অন্যান্য নেতারাও সমর্থন করেছেন।
পি. চিদম্বরমের এই অভিযোগ ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া এবং তামিলনাড়ুতে ৬.৫ লক্ষ ভোটার সংযুক্তির এই বিতর্ক আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের মতো অন্যান্য দলও এই ধরনের ঘটনাকে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং এই সংশোধন প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে আলোচনা এখন আইনি ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র আকার নিতে চলেছে।