ছত্তিশগড়: ছত্তিশগড়ে এক ঐতিহাসিক দিনে মাওবাদ বিরোধী লড়াইয়ে দেখা গেল নতুন দিগন্ত। বৃহস্পতিবার একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করলেন ১৭০ জন মাওবাদী, যাদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপ-অঞ্চল কমান্ডার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রূপেশ। এই আত্মসমর্পণকে বলা হচ্ছে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাওবাদী আত্মসমর্পণ অভিযান।
সূত্র অনুযায়ী, রূপেশ ও তাঁর সহযোগীরা বিপজ্জনক উসপারি ঘাট পেরিয়ে ইন্দ্রাবতী নদী অতিক্রম করে পৌঁছেছিলেন ভৈরমগড়ে। সেখানে জেলা রিজার্ভ গার্ড (DRG) এবং পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। পরে বিজাপুর থেকে অফিসিয়ালি ঘোষণা হয় এই বিশাল আত্মসমর্পণের।
লঞ্চ হল Triumph Speed Triple 1200 RX, মাত্র ৫জন ভারতীয়র ভাগ্যে জুটবে!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স (X)-এ পোস্ট করে লেখেন, “আজ ছত্তিশগড়ে ১৭০ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল মহারাষ্ট্রে ৬১ জন ও ছত্তিশগড়ে আরও ২৭ জন অস্ত্র নামিয়ে রেখেছিলেন। দুই দিনে মোট ২৫৮ জন চরমপন্থী মূলধারায় ফিরে এসেছেন। এটি আমাদের নকশালবিরোধী অভিযানের ঐতিহাসিক সাফল্য।”
এই অভিযানের মূল কেন্দ্র ছিল ভৈরমগড় অঞ্চল। নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকাটিকে ঘিরে ফেলে একপ্রকার দুর্গে পরিণত করে। DRG, BSF ও স্থানীয় পুলিশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা নজরদারি চালায়। রূপেশের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছেন প্রায় ১৩০ জন শীর্ষ মাওবাদী, যার মধ্যে ছিলেন ১ জন কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য (CCM), ২ জন ডিভিশনাল কমিটি সদস্য এবং ১৫ জন ডেপুটি কমান্ডার। এছাড়াও মাদ ডিভিশনের একাধিক সক্রিয় সদস্যও আত্মসমর্পণ করেছেন — যে অঞ্চল বহু বছর ধরেই ছিল মাওবাদীদের দুর্গ।
আত্মসমর্পণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার একে-৪৭, ইনসাস রাইফেল, কারবাইন ও এসএলআর সহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এই অস্ত্র বাজেয়াপ্ত হওয়ায় দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের মাওবাদী নেটওয়ার্কে এক বড় ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “অভূতপূর্ব আনন্দের বিষয়, আজ আবুজমাড় ও উত্তর বস্তার অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নকশালমুক্ত। এখন শুধু দক্ষিণ বস্তারে ছিটেফোঁটা নকশাল অবশিষ্ট, তাদেরও শিগগিরই নির্মূল করা হবে। যারা অস্ত্র ছাড়তে চায়, তাদের স্বাগত জানানো হবে; আর যারা বন্দুক ধরেই রাখবে, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নিরাপত্তা বাহিনীর রোষ।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মাওবাদী পলিটব্যুরো সদস্য সোনু ওরফে ভেনুগোপালের আত্মসমর্পণের পর থেকেই সংগঠন একপ্রকার ভেঙে পড়ার পথে। রূপেশ নিজেও শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে ছিলেন বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি। গত এপ্রিল মাসে তিনি প্রকাশ্যে একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, “জনগণের সঙ্গে সংঘাত নয়, সংলাপই একমাত্র পথ।”
ছত্তিশগড়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা বলেন, “বস্তারের মানুষ রক্ত নয়, শান্তি চায়। যারা অস্ত্র ছেড়ে মূলধারায় ফিরছেন, আমরা তাঁদের লাল গালিচায় স্বাগত জানাচ্ছি। প্রত্যেকটি আত্মসমর্পণ শান্তির পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে রাজ্যকে।”
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছর এখন পর্যন্ত ১,৬০০-রও বেশি মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন, নিহত হয়েছেন ৩১২ জন, আর গ্রেফতার হয়েছেন ৮৩৬ জন। কেন্দ্রীয় তথ্য বলছে, মাওবাদী আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ১২৬ থেকে নেমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩-এ বিজাপুর, সুকমা ও নারায়ণপুর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আত্মসমর্পণ শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্য নয়, বরং স্থানীয় প্রশাসন ও জনমতেরও জয়। এক দশক আগে যে ছত্তিশগড় জ্বলছিল রক্তে, আজ সেখানে বাজছে শান্তির নতুন সুর।