রাইপুর: নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এক বিরাট ও ঐতিহাসিক সাফল্য৷ শুক্রবার ছত্তিশগড়ের মাওবাদী-উপদ্রুত দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে আত্মসমর্পণ করেন ২১০ জন মাওবাদী৷ যাঁদের মধ্যে একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাও ছিলেন৷ তাঁরা অস্ত্র সমর্পণ করে আত্মসমর্পণ করেছেন। দেশের ইতিহাসে এটিকে মাওবাদী বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সম্মিলিত আত্মসমর্পণ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
আত্মসমর্পণ: এক নতুন যুগের সূচনা
ছত্তিশগড়ের জগদলপুরে মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাইয়ের উপস্থিতিতে এই আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ ও সমাজের মূলস্রোতে প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। এই বিশেষ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে “পূনা মার্গেমে: পুনর্বাসন থেকে পুনর্জন্ম” (Poona Margem: From Rehabilitation to Rebirth)। এর মাধ্যমে সরকার বার্তা দিল যে, বলপ্রয়োগের চেয়েও উন্নয়ন, সংলাপ এবং আস্থাই শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রধান মাধ্যম।
অস্ত্র সমর্পণকারীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী নেতারা: Chhattisgarh Maoist Surrender
১ জন সেন্ট্রাল কমিটি (Central Committee) সদস্য
৪ জন দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটি (DKSZC) সদস্য
২১ জন ডিভিশনাল কমিটি সদস্য
এছাড়াও রুদ্রবাহিনী, এরিয়া কমিটি এবং জন মিলিশিয়ার বহু সিনিয়র নেতা।
আত্মসমর্পণকারীরা ১৫৩টি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে একে-৪৭ (AK-47), এসএলআর (SLR), ইনসাস রাইফেল (INSAS Rifles) এবং এলএমজি (LMG)। এই বিপুল সংখ্যক অস্ত্র সমর্পণকে সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি এবং অঞ্চলে শান্তির নিশ্চিত সূচনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা: নকশাল নির্মূল নীতি ২০২৫-এর সাফল্য
এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে বস্তার এবং দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতার দিকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই।
তিনি বলেন, “এই আত্মসমর্পণ আমাদের ‘পূনা মার্গেমে: পুনরবাস সে পুনর্জীবন’ নীতির প্রতিশ্রুতির প্রতিচ্ছবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার সমাজের প্রতিটি প্রান্তকে শান্তি ও উন্নয়নের মূলস্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। এটি প্রমাণ করে যে, সহিংসতা নয়, আস্থা, আলোচনা এবং উন্নয়নভিত্তিক আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকৃত ফল দিচ্ছে।”
এই গণ-আত্মসমর্পণকে সরকারের নকশাল নির্মূল নীতি ২০২৫ (Naxal Eradication Policy 2025)-এর বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই নীতি নিরাপত্তা অভিযানকে কল্যাণমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত করে মাওবাদীদের মন পরিবর্তনে জোর দেয়। পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই এই ব্যাপক আত্মসমর্পণ সম্ভব হয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।