ছত্তিশগড়ের (chhattisgarh) বিজাপুর জেলার ঘন জঙ্গলে সম্প্রতি একটি তীব্র এনকাউন্টারে কুখ্যাত মাওবাদী কমান্ডার বাসবরাজ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনাটি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ বাসবরাজ ছিলেন নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী)-র সেন্ট্রাল কমিটির একজন শীর্ষ নেতা।
তার মাথার উপর দেড় কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। এই এনকাউন্টারে মোট ২৭ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যা গত কয়েক দশকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযানগুলির মধ্যে একটি।
অপারেশন সংকল্প: মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান (chhattisgarh)
এই এনকাউন্টারটি ছত্তিশগড়-তেলঙ্গানা (chhattisgarh)সীমান্তের কারেগুট্টালু পাহাড়ে ঘটেছে , যেখানে ‘অপারেশন সংকল্প’ নামে একটি বড় মাপের অভিযান চলছিল। এই অভিযান গত ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল এবং এতে ছত্তিশগড়, তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের প্রায় ১০,০০০ নিরাপত্তা কর্মী অংশ নিয়েছিলেন।
অভিযানটির লক্ষ্য ছিল মাওবাদীদের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ইউনিট, পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (পিএলজিএ)-র ব্যাটালিয়ন নম্বর ১-কে নিশ্চিহ্ন করা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে (chhattisgarh)‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে এই অভিযানে ৩১ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। নিহত মাওবাদীদের মাথায় মোট ১.৭২ কোটি টাকার পুরস্কার ছিল, যা এই অভিযানের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
বাসবরাজ: মাওবাদী আন্দোলনের মূল স্তম্ভ
বাসবরাজ ছিলেন মাওবাদী সংগঠনের একজন প্রধান কমান্ডার এবং সেন্ট্রাল কমিটির মুখ্য সদস্য। তার বয়স প্রায় ৭০ বছর, এবং তার শেষ পরিচিত ছবি প্রায় ৩০ বছরের পুরনো। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদী(chhattisgarh) আন্দোলনের কৌশলগত এবং সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাসবরাজের নেতৃত্বে ব্যাটালিয়ন নম্বর ১ অতীতে একাধিক বড় হামলার জন্য দায়ী ছিল, যার মধ্যে ২০১০ সালের তাডমেটলা হামলায় ৭৬ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু অন্যতম।
বাসবরাজের মৃত্যুকে মাওবাদী সংগঠনের জন্য ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি শুধুমাত্র একজন সামরিক নেতা ছিলেন না, বরুল মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য বিশেষ জোনাল কমিটি এবং তেলঙ্গানা রাজ্য কমিটির কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
উত্তরবঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে নজরদারিতে জোর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
অভিযানের বিবরণ
অপারেশন সংকল্পের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনী কারেগুট্টালু পাহাড়ে (chhattisgarh)মাওবাদীদের ঘাঁটি ঘিরে ফেলে। এই অঞ্চলটি ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি ভূখণ্ডের জন্য পরিচিত, যা মাওবাদীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করত। অভিযানে অংশ নেওয়া নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ছিল ছত্তিশগড় পুলিশের ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (DRG), বস্তার ফাইটার্স, স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF), কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF) এবং এর এলিট কোবরা ইউনিট।
এনকাউন্টারের সময় নিরাপত্তা বাহিনী ৩৫টি অস্ত্র, ৪৫০টিরও বেশি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ডেটোনেটর, বিস্ফোরক সামগ্রী এবং প্রায় ১২,০০০ কিলোগ্রাম অন্যান্য লজিস্টিক সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এছাড়াও মাওবাদীদের প্রচার সাহিত্য এবং চিকিৎসা সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে চারটি মাওবাদী টেকনিক্যাল ইউনিট ধ্বংস করা হয়েছে, যারা অস্ত্র তৈরি এবং আইইডি তৈরির জন্য দায়ী ছিল।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই অভিযানের পর কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন যে এই সাফল্য মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির ফল। তিনি বলেন, “এই অভিযান মাওবাদীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। আমরা ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদীদের সম্পূর্ণ নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তবে, এই এনকাউন্টারের পর রাজনৈতিক বিতর্কও উঠেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল অভিযোগ করেছেন যে মাওবাদী নির্মূলের নামে নিরীহ আদিবাসীদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “একদিকে সুশাসন তিহারের নামে মাওবাদী নির্মূলের দাবি করা হচ্ছে, অন্যদিকে নিরীহ আদিবাসীরা নিহত হচ্ছেন।”
মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা অভিযান
২০২৪ সাল থেকে ছত্তিশগড়ে (chhattisgarh)মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্রতর হয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৪০ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১২৩ জনই বস্তার অঞ্চলে। এছাড়াও, অনেক মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন, যার মধ্যে বিজাপুরে ৫০ জন এবং দান্তেওয়াড়ায় ২৬ জন মাওবাদী অস্ত্র ত্যাগ করেছেন।
নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে যে মাওবাদীদের নেতৃত্ব এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বাসবরাজের মতো শীর্ষ(chhattisgarh) নেতার মৃত্যু মাওবাদী সংগঠনের মনোবল ভেঙে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই অঞ্চলে মাওবাদীদের উপস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি, এবং নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
বাসবরাজের মৃত্যু (chhattisgarh)এবং কারেগুট্টালু পাহাড়ে এনকাউন্টার ভারতের মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি নিরাপত্তা বাহিনীর কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব এবং দৃঢ় সংকল্পের প্রমাণ। তবে, এই অভিযানের ফলে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে মাওবাদকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা, এবং এই ঘটনা সেই লক্ষ্যের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।