ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় আবারও মাওবাদীদের বড়সড় ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেল। নিরাপত্তা বাহিনী একটি বড় মাওবাদী হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সোমবার সকালে যৌথ তল্লাশি অভিযানে কারেগুট্টা পাহাড়ি অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল বিজাপুরের একটি ক্যাম্প থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে।
পাঁচটি চাপযুক্ত আইইডি উদ্ধার
অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী মোট পাঁচটি চাপযুক্ত আইইডি (Improvised Explosive Device) উদ্ধার করে। এগুলি ছিল মাটির নিচে পুঁতে রাখা, যাতে নিরাপত্তা বাহিনী টহলে বের হলে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়। সঙ্গে সঙ্গে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সমস্ত বিস্ফোরক নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করে।
মাওবাদীদের লক্ষ্য ছিল বড় হামলা
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কারেগুট্টা পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েক দিন আগে একটি নতুন বেস ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। মাওবাদীরা সেই ক্যাম্পকে টার্গেট করেই বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছিল। সূত্রের খবর, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা।
যৌথ তল্লাশি অভিযান
সোমবার সকালে ক্যাম্প থেকে বের হয় কোবরা ২০৬ ব্যাটালিয়ন, সিআরপিএফ-এর ২২৯, ১৫৩ ও ১৯৬ ব্যাটালিয়ন-এর যৌথ দল। জঙ্গলে ঢুকে তল্লাশি চালানোর সময়ই বিস্ফোরকগুলির খোঁজ মেলে। সময়মতো আইইডি নিষ্ক্রিয় করায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।
বিজাপুরে মাওবাদী সমস্যা
ছত্তিশগড়ের বিজাপুর দীর্ঘদিন ধরেই মাওবাদী কার্যকলাপের অন্যতম ঘাঁটি। ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় মাওবাদীরা এখানে সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই প্রায়শই এখানে আইইডি বিস্ফোরণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
গত কয়েক বছরে মাওবাদীদের কার্যকলাপ কিছুটা কমলেও এখনও ছত্তিশগড়, বিশেষত বিজাপুর ও সুকমা জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়। এ পর্যন্ত বহুবার যৌথ অভিযানে মাওবাদীদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হয়েছে।
সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর কৌশল
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মাওবাদী দমনে গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ কৌশল নিয়েছে। শুধু নিরাপত্তা অভিযান নয়, পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট তৈরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মতো সামাজিক উন্নয়নমূলক উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বহু গ্রামবাসী ধীরে ধীরে মাওবাদীদের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসছে।
তবে নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, মাওবাদীরা এখনও এলাকায় সক্রিয়। সুযোগ পেলেই তারা আইইডি বিস্ফোরণ বা আকস্মিক হামলার চেষ্টা চালায়। তাই প্রতিটি অভিযানে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর এই সাফল্য প্রমাণ করে, মাওবাদীদের বড়সড় ষড়যন্ত্র এখনও সক্রিয় থাকলেও সময়মতো পদক্ষেপে তা ব্যর্থ করা সম্ভব। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের তৎপরতায় বহু জওয়ানের প্রাণ বাঁচানো গেল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল নিরাপত্তা অভিযান নয়, মাওবাদী সমস্যার মূল সমাধান হবে উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে।