ছত্তিশগড়ে আত্মসমর্পণ লাখ টাকার ২২ নকশালের

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) নারায়ণপুর জেলার অভুজমাড় অঞ্চলে নকশালবিরোধী অভিযানে বড় সাফল্য পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ২২ জন নকশাল, যাদের মাথায় মোট ৩৭.৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষিত ছিল,…

Chhattisgarh nakshal surrendar

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) নারায়ণপুর জেলার অভুজমাড় অঞ্চলে নকশালবিরোধী অভিযানে বড় সাফল্য পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ২২ জন নকশাল, যাদের মাথায় মোট ৩৭.৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষিত ছিল, নারায়ণপুর পুলিশের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে। এই নকশালদের মধ্যে ৮ জন মহিলা এবং ১৪ জন পুরুষ রয়েছেন, যারা মাওবাদী সংগঠনের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় ছিলেন।

নারায়ণপুরের পুলিশ সুপার রবিনসন গুরিয়া জানিয়েছেন, “গত এক বছর ধরে নারায়ণপুর জেলায় মোতায়েন সমস্ত বাহিনী যৌথভাবে একটি নরম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, যার মূল লক্ষ্য নকশালদের আত্মসমর্পণে উৎসাহিত করা। ছত্তিশগড় (Chhattisgarh) সরকারের আত্মসমর্পণ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা সক্রিয়ভাবে নকশালদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।” এই ঘটনা নকশালবিরোধী অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

   

আত্মসমর্পণের পটভূমি

অভুজমাড়, যা একসময় মাওবাদীদের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল, সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্রমাগত চাপ এবং সরকারের নতুন পুনর্বাসন নীতির প্রভাবে নকশালরা (Chhattisgarh) আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিচ্ছেন। এই ২২ জন নকশালের মধ্যে এলাকা কমিটির সদস্য সুখলাল এবং তাঁর স্ত্রীও রয়েছেন, যারা কুতুল এলাকায় সক্রিয় ছিলেন।

তাদের মাথায় পুরস্কারের পরিমাণ ৫০,০০০ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছিল। নকশালরা (Chhattisgarh)মাওবাদী মতাদর্শের প্রতি হতাশা, আদিবাসীদের উপর অত্যাচার এবং বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে।

ছত্তিশগড় সরকারের আত্মসমর্পণ নীতি

ছত্তিশগড় (Chhattisgarh) সরকারের নতুন ‘ছত্তিশগড় নকশাল আত্মসমর্পণ/ভিকটিম রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন পলিসি-২০২৫’-এর আওতায় আত্মসমর্পণকারী নকশালদের জন্য একাধিক সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। এই নীতির মাধ্যমে নকশালদের আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যেক আত্মসমর্পণকারী নকশালকে (Chhattisgarh)তাৎক্ষণিকভাবে ৫০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি নীতি অনুসারে আরও সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া, যারা অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থাও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই বলেছেন, “এই নীতি নকশালদের সাধারণ জীবনে ফিরে আসার জন্য একটি নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।”

নিরাপত্তা বাহিনীর কৌশল (Chhattisgarh)

নারায়ণপুর(Chhattisgarh) পুলিশ সুপার রবিনসন গুরিয়া জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী গত এক বছর ধরে ‘মাড় বাঁচাও অভিযান’ (সেভ মাড় ক্যাম্পেইন)-এর মাধ্যমে নকশালদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের আত্মসমর্পণে উৎসাহিত করছে। এই অভিযানের মাধ্যমে পুলিশ, ডিআরজি, বিএসএফ এবং আইটিবিপি-র যৌথ উদ্যোগে গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের মাওবাদীদের ভ্রান্ত মতাদর্শ ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

গুরিয়া বলেন, “আমরা নকশাল ভাই-বোনদের বলছি, এখন সময় এসেছে মাওবাদীদের বিভ্রান্তিকর মতাদর্শ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ জীবনে ফিরে আসার। মাড়কে তার আদি বাসিন্দাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে।”

Advertisements

অভুজমাড়ে নকশালমুক্ত অঞ্চল গড়ার স্বপ্ন

অভুজমাড়, (Chhattisgarh) যা দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল, সেখানে নকশালমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে চলেছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত নারায়ণপুর জেলায় মোট ১০৪ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেছে। গত বছর বস্তার অঞ্চলের সাতটি জেলায় মোট ৭৯২ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেছিল।

এই আত্মসমর্পণগুলি সরকারের ‘নিয়াড় নেল্লানার’ (তোমার ভালো গ্রাম) প্রকল্প এবং নতুন পুনর্বাসন নীতির সাফল্যের প্রমাণ। এই প্রকল্পের আওতায়, যে গ্রামগুলি নকশালমুক্ত ঘোষিত হচ্ছে, সেগুলিকে ১ কোটি টাকার উন্নয়ন তহবিল প্রদান করা হচ্ছে।

নকশালদের প্রতিক্রিয়া এবং সামাজিক প্রভাব

আত্মসমর্পণকারী (Chhattisgarh) নকশালরা জানিয়েছেন, তারা মাওবাদীদের ‘ফাঁপা’ এবং ‘অমানবিক’ মতাদর্শের প্রতি হতাশ। তারা বলছেন, মাওবাদী নেতারা আদিবাসীদের শোষণ করছে এবং তাদের জীবনকে বিপন্ন করছে। সরকারের পুনর্বাসন নীতি এবং গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি তাদের মূলধারায় ফিরে আসতে উৎসাহিত করেছে। নকশালদের আত্মসমর্পণ বস্তার অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও উন্নয়নের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।

‘টুপি দাড়িওয়ালাদের সবুজ সাপ’, বলে বিতর্কে বিজেপি নেতা

কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Chhattisgarh) অমিত শাহ নকশালবাদ নির্মূলের জন্য ৩১ মার্চ, ২০২৬-এর সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। তিনি নকশালদের অস্ত্র ত্যাগ করে মূলধারায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শাহ বলেছেন, “ছত্তিশগড় পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্য নকশালবিরোধী অভিযানে একটি বড় অর্জন। আমি লুকিয়ে থাকা নকশালদের বলছি, মোদী সরকারের আত্মসমর্পণ নীতি গ্রহণ করে মূলধারায় যোগ দিন।”

২২ জন নকশালের আত্মসমর্পণ অভুজমাড়ে নকশালবাদ নির্মূলের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ছত্তিশগড় সরকারের নতুন পুনর্বাসন নীতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নরম পদ্ধতি নকশালদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সফল হচ্ছে।

এই ঘটনা কেবল নিরাপত্তা বাহিনীর কৌশলগত সাফল্যই নয়, বরং অভুজমাড়ের (Chhattisgarh) আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য শান্তি ও উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনারও সূচনা করেছে। আগামী দিনে এই প্রচেষ্টা কীভাবে নকশালবাদ নির্মূলের লক্ষ্য পূরণ করে, তা দেখার বিষয়।