রায়পুর: ছত্তীসগড়ে মাওবাদী (Maoist surrender) দমনে বড় সাফল্য রাজ্য পুলিশের। বুধবার উত্তর বস্তার জেলার কাঁকেড় মহকুমা ও কেস্কেল ডিভিশন জুড়ে ২১ জন সক্রিয় মাওবাদী আত্মসমর্পণ করলেন পুলিশের কাছে। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ছিলেন ১৩ জন মহিলা ও ৮ জন পুরুষ, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নকশাল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৮টি অস্ত্র, যার মধ্যে রয়েছে একে-৪৭ রাইফেল, ইনসাস, এসএলআর এবং আরও কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় কাঁকেড়ের জঙ্গলওয়ার কলেজে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বস্তার অঞ্চলের ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (IGP) সুন্দররাজ পি., যিনি ব্যক্তিগতভাবে আত্মসমর্পণকারীদের হাতে ভারতের সংবিধানের অনুলিপি তুলে দেন। লালগালিচা বিছিয়ে স্বাগত জানানো হয় প্রাক্তন মাওবাদীদের। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—অস্ত্র নয়, সংবিধান ও গণতন্ত্রের পথেই প্রকৃত স্বাধীনতা ও উন্নয়ন সম্ভব।
আইজিপি সুন্দররাজ জানান, “আজকের এই আত্মসমর্পণ শুধুমাত্র পুলিশের সাফল্য নয়, এটি সমাজেরও সাফল্য। ২১ জন মাওবাদী মূলস্রোতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের আমরা সমস্তরকম সাহায্য করব যাতে তাঁরা নতুন জীবন শুরু করতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের আহ্বান, যারা এখনও জঙ্গলে রয়েছে, তারা যেন উন্নয়নের পথে ফিরে আসে। সরকার তাঁদের পুনর্বাসন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।”
সূত্রের খবর, আত্মসমর্পণকারীরা মূলত কেস্কেল ও উত্তর বস্তারের দূরবর্তী এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ও গ্রামীণ উন্নয়নের প্রকল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ বাড়ে। অবশেষে তারা অস্ত্র ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
একজন মহিলা আত্মসমর্পণকারী বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে জঙ্গলে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এখন বুঝেছি, উন্নয়নের পথেই ভবিষ্যৎ। আমাদের সন্তানদের জন্য শান্তিপূর্ণ জীবন চাই।”
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আত্মসমর্পণকারীদের ‘নকশাল পুনর্বাসন নীতি’র আওতায় আর্থিক সহায়তা, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে। তাঁদের সমাজে ফিরিয়ে আনতে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সুবিধার ব্যবস্থাও করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বস্তার অঞ্চলে এই আত্মসমর্পণ রাজ্য সরকারের নীতি ও পুলিশের মনস্তাত্ত্বিক অভিযানের সাফল্যের প্রতীক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বস্তার, দান্তেওয়াড়া ও সুকমা অঞ্চলে একাধিক মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। সরকারের পুনর্বাসন ও সংবিধানমুখী প্রচার কর্মসূচি এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের মতে, আত্মসমর্পণের এই ধারা বজায় থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ছত্তীসগড়ের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলি শান্ত ও স্থিতিশীল হতে পারে।


